শরীর ফিট রাখার 10 টি উপায় - আজই চেষ্টা করুন

শরীর ফিট রাখার 10 টি উপায় অনুসরণ করে আপনি সুস্থ এবং সক্রিয় জীবন যাপন করতে পারবেন। প্রতিদিনের কিছু সহজ অভ্যাস ও সঠিক খাদ্যভ্যাস আপনার শারীরিক ফিটনেস বজায় রাখতে সাহায্য করে। 

শরীর-ফিট-রাখার-10-টি-উপায়

এছাড়া আজকের আর্টিকেল অতিরিক্ত তথ্য হিসাবে থাকছে শরীর ফিট রাখার কৌশল এবং কি খেলে শরীর ফিট থাকে তার বিজ্ঞানসম্মত উপায় সম্পর্কে জানতে পারবেন। গুরুত্বপূর্ণ আরও তথ্য পেতে আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন। 

পোস্ট সূচীপত্রঃ শরীর ফিট রাখার 10 টি উপায়

শরীর ফিট রাখার 10 টি উপায়

শরীর ফিট রাখার 10 টি উপায় সম্পর্কে আজকের প্রতিবেদনের মাধ্যমে জানতে পারবেন। আমাদের ব্যস্ত জীবনে শারীরিক ফিটনেস বজায় রাখা একটি চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়ে গেছে।নিয়মিত ব্যায়াম করলে আপনার শারীরিক স্বাস্থ্যই নয় বরং মানসিক স্বাস্থ্যকে ও ভালো রাখা যায়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং আমেরিকান কলেজ অব স্পর্টস মেডিসিন অনুসারে একজন প্রাপ্তবয়স্কদের সপ্তাহে ১৫০ মিনিট এবং মাঝারি তীব্রতার শারীরিক কার্যকলাপ বা ৭৫ মিনিট উচ্চ তীব্রতার ব্যায়াম করা উচিত। তাহলে চলুন, শরীর ফিট রাখার ১০ টি উপায় সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।

নিয়মিত বায়বীয় ব্যায়াম করুন

বায়বীয় ব্যায়াম বা অ্যারোবিক আমাদের হৃদপিণ্ড এবং ফুসফুসের কার্যকারিতা বাড়াতে সাহায্য করে। এর মধ্যে রয়েছে হাঁটা, দৌড়ানো, সাইকেল চালানো, সাঁতার কাটা ইত্যাদি বিষয় অন্তর্ভুক্ত।তাছাড়া আরেকটি গবেষণায় দেখা যায় যারা সপ্তাহে ৩০০-৫৯৯ মিনিট মধ্যম তীব্রতার বায়বীয় ব্যায়াম করেন তাদের মৃত্যু ঝুঁকি ২৬-৩১% কম এবং হৃদরোগে মৃত্যুর ঝুঁকি ২৮-৩৮% কম।যারা উচ্চস্বতীব্রতার বায়বীয় ব্যায়াম করে মানে

সপ্তাহে (১৫০-২৯৯ মিনিট) করেন তাহলে মৃত্যুর ঝুঁকি ২১-৩০% কম হয়। অ্যারোবিক ব্যায়াম (মানে হল এমন এক ধরনের শারীরিক ব্যায়াম যা দীর্ঘ সময় ধরে চালিয়ে যাওয়া হয় এবং এতে শরীরের অক্সিজেন গ্রহণ ও ব্যবহার বৃদ্ধি পায়। আপনি যদি প্রতিদিন ২০ থেকে ৩০ মিনিট অ্যারোবিক ব্যায়াম করেন তাহলে আপনি দীর্ঘ সময় ধরে সুস্থ থাকবে।আপনাদের মধ্যে যাদের সময় কম তারা সকালে ২০ মিনিট এবং বিকালে ২০ মিনিট ব্যায়াম করতে পারে। 

তথ্যসূত্রঃ American Medical Association, Healthline

শক্তি প্রশিক্ষণ - Strength Training

এটি শুধু আপনার পিসি গঠন করে না বরং আমাদের হারকেও শক্তিশালী করে এবং আপনার বয়স বাড়ার সাথে সাথে যে পেশি ক্ষয় হয় তা রোধ করতে সাহায্য করে।গবেষণায় দেখা যায় ৭০ বছর বয়সের পরেও শক্তি প্রশিক্ষণ শুরু করলে পেশি ক্ষয় রোধ করা যায়। আপনি প্রতি সপ্তাহে ২-৩ দিন শক্তি প্রশিক্ষণ করুন। 

এর মধ্যে রয়েছে স্কোয়াট, লাঞ্জ, প্ল্যাঙ্ক, পুশ-আপ, ভারোত্তোলন ইত্যাদি। শক্তি প্রশিক্ষণের সুবিধা গুলো যদি বলি তাহলে আপনার ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমানো, হাড় শক্তিশালী করা, রক্তচাপ কমানো এবং দীর্ঘ আয়ু বৃদ্ধি করা। আপনার যদি জয়েন্টের সমস্যা থাকে তাহলে রেজিস্ট্যান্স ব্যান্ড ব্যবহার করে ব্যায়াম করতে পারেন। 

তথ্যসূত্রঃ Mayo Clinic, Harvard Health

নমনীয়তা ব্যায়াম অথবা ফ্লেক্সিবিলিটি এক্সারসাইজ

এটি আপনার শরীরের সন্ধি এবং পেশিগুলোকে নমনীয় রাখে যা আপনার চলাফেরা সহজ এবং ইনজুরি প্রতিরোধ করে। তাছাড়া গবেষণায় দেখা গেছে আপনি যদি নিয়মিত স্ট্রেচিং ( এটি এমন এক শারীরিক ব্যায়াম যা কৃষি অথবা তিন বোনের প্রসারণ বা প্রসারিত করা হয় ) করেন তাহলে ৮ সপ্তাহের মধ্যে

নমনীয়তা ৩৫ পার্সেন্ট বৃদ্ধি হতে পারে। এছাড়া স্ট্রেচিং করার সময় প্রতি পজিশন ৩০ সেকেন্ড ধরে রাখুন। আপনি প্রতিদিন ১০-৬০ থেকে মিনিট স্ট্রেচিং করলে উল্লেখযোগ্য ফল পাবেন বলে আশা করা যায়। তাছাড়া ওয়ার্ক আউটের পরে স্ট্রেচিং করলে আপনার পেশীতে টান কমে এবং রক্ত সঞ্চালন ভালো হয়। 

তথ্যসূত্রঃ Mayo Clinic, WebMD, PubMed

উচ্চ তীব্রতা ব্যবধান প্রশিক্ষণ

এই ব্যায়াম করার কার্যকর পদ্ধতি আপনি অল্প সময়ের জন্য অত্যন্ত তীব্র ব্যায়াম করেন এবং কিছুক্ষণ বিশ্রাম নেন এবং এই চক্র বার বার পুনরাবৃত্তি করেন। আপনি যদি এই পদ্ধতি অবলম্বন করেন তাহলে কম সময়ে অধিক ক্যালোরি পড়ার পাশাপাশি মেটাবলিক রেট বাড়ায়।এছাড়া আপনি ৩০ সেকেন্ড জোরে দৌড়ান এবং ১-৩ মিনিট ধীরে হাট অথবা বিশ্রাম নিন এবং এই চক্র ১০ থেকে ৩০ মিনিট এর জন্য পুনরাবৃত্তি করুন। এটি করার ফলে আপনার রক্তচাপ কমানোর পাশাপাশি ওজন কমাতেও সাহায্য করে। 

তথ্যসূত্রঃ Mayo Clinic Health System, Max Healthcare

ভারসাম্য ব্যায়াম অথবা ব্যালেন্স এক্সারসাইজ

এটি বিশেষ করে বয়স্কদের পড়ে যাওয়া রোধ করতে এবং প্রতিদিনের কাজকর্ম সহজ করতে সাহায্য করে। এর মধ্যে হল তাই চি ( এটি একটি চিনা ব্যায়াম যা ধীরে ধীরে শরীরকে নড়াচড়া করার মাধ্যমে ভারসাম্য এবং শক্তি বজায় রাখে/শরীরের গতি, বেশি এবং মন শান্ত রাখা ) এবং যোগাসন ( এটি একটি ভারতীয় ব্যায়াম যেখানে শরীরের বিভিন্ন পোজ এবং শ্বাস-প্রশ্বাসের কৌশল ব্যবহার করা হয় শরীর ও মন শান্ত এবং শক্তিশালী রাখার জন্য ) ইত্যাদি। 
আপনি প্রতিদিন ১০-১৫ মিনিট ভারসাম্য ব্যায়াম করুন এবং এক পায়ে দাঁড়ানো, এক পায়ের সামনে অন্য পা রেখে হাঁটা, একটি পায়ের সামনে অন্য পা রেখে দাঁড়ানো ইত্যাদি সহজ ভারসাম্য ব্যায়াম করতে পারেন। ভারসাম্য ব্যায়াম করলে আপনার শরীরের মাঝের পেশি যেমনঃ পেট, পিঠ এবং কোমরের পেশী শক্তিশালী হয়। এছাড়া সঠিকভাবে দাঁড়ানো, বসা এবং চলাফেরা করার জন্য বেশি শক্তিশালী হয়। আপনাদের মধ্যে যারা বয়স্ক রয়েছেন তাদের স্বাধীনভাবে চলাফেরা করতে এটি সাহায্য করে। 

তথ্যসূত্রঃ Healthline

নিয়মিত হাটা অথবা রেগুলার ওয়াকিং

হাঁটা হলো সবচেয়ে সহজ এবং এটি আপনার ও আমার, সবার জন্য উপযুক্ত ব্যায়াম।একটি গবেষণায় দেখা যায় প্রতি সপ্তাহে অতিরিক্ত ৫০০ কিলো ক্যালরি শক্তি ব্যয় করলে টাইপ ২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি ৬% কমে যায়। সেজন্য আপনি প্রতিদিন ৩০ মিনিট দ্রুত হাঁটার চেষ্টা করুন। হাঁটার গতি এমন রাখুন যেন শরীর ঘেমে যায় এবং আপনার হৃদস্পন্দন বেড়ে যায়।এমন জুতা

ব্যবহার করুন যা আপনার জন্য সুবিধা জনক এবং সম্ভব হলে প্রাকৃতিক পরিবেশে হাঁটার চেষ্টা করুন। আপনি যদি নিয়মিত হাঁটেন তাহলে হৃদরোগের ঝুঁকে কমানো, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা এবং ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করা ও মানসিক চাপ কমানো, হাড়কে শক্তিশালী করে। 

তথ্যসূত্রঃ PubMed, প্রথম আলো

পর্যাপ্ত হাইড্রেশন এবং পুষ্টি

আপনাকে ব্যায়ামের পাশাপাশি ভালো পোস্টটি এবং পর্যাপ্ত পানি পান করতে হবে।প্রতিদিন অন্তত আপনি ৮ গ্লাস পানি পান করুন। ব্যায়ামের আগে, সময় এবং পরে পর্যাপ্ত পানি পান করুন। খাদ্য প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট, স্বাস্থ্যকর ফ্যাট, ভিটামিন এবং মিনারেল সঠিক ভারসাম্য রাখুন। 

এছাড়া আপনি প্রচুর পরিমানে ফল, শাকসবজি এবং সবুজ দানা শস্য ও লিন প্রোটিন খান। তাছাড়া প্রক্রিয়াজাত খাবার যেমন অতিরিক্ত চিনি, এবং লবণ এড়িয়ে চলুন। ভালো পুষ্টি আপনার ব্যায়ামের কার্যকারিতা বাড়ানোর পাশাপাশি পুনরুদ্ধারের সাহায্য করে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় ও স্বাস্থ্য উন্নত করে। 

তথ্যসূত্রঃ প্রথম আলো

পর্যাপ্ত বিশ্রাম এবং ঘুম

আপনি নিয়মিত ব্যায়ামের পাশাপাশি পর্যাপ্ত বিশ্রাম এবং ঘুম ঠিক মতো মেনে চলুন।একজন প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য প্রতিরাতে ৭-৯ ঘন্টা ঘুম প্রয়োজন। ঘুমের সময় আমাদের শরীর নিজেকে পুনরুদ্ধার করে এবং নতুন পেশি তৈরি করতে সাহায্য করে। আপনি যে দিনগুলোতে ব্যায়ামের জন্য নির্ধারিত রেখেছেন সেই দিনগুলোর মধ্যে বিশ্রামের দিন ও রাখুন। অতিরিক্ত ব্যায়াম ইনজুরি অথবা ক্লান্তির কারণ হতে পারে সেজন্য নিয়মিত ঘুম আপনার হরমোনের ভারসাম্য বজায় রাখতে এবং মানসিক স্বাস্থ্য উন্নত করতে ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।

তথ্যসূত্রঃ Harvard Health

ধারাবাহিকতা এবং রুটিন

আপনি যদি চান শরীর ফিট রাখতে সেক্ষেত্রে ধারাবাহিকতা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।আপনি একটি নির্দিষ্ট সময়সূচি তৈরি করুন এবং সেটি মেনে চলুন। চেষ্টা করবেন নিজের পরিবর্তন ধীরে ধীরে আনার এবং একসাথে অনেক পরিবর্তন চেষ্টা করলে, দীর্ঘ মেয়াদের টিকিয়ে রাখা কঠিন হতে পারে। সপ্তাহে একদিন আপনার অগ্রগতি পর্যালোচনা করুন এবং আপনার লক্ষ্য ঠিক রাখুন।

ব্যায়ামের বিভিন্ন ধরন পরীক্ষা করুন যাতে আপনি কোনটি পছন্দ করেন তা খুঁজে বের করতে পারেন। মনে রাখবেন আপনি যে পছন্দ করেন সেটাই আপনি দীর্ঘকাল করবেন। এছাড়া আপনি ফিটনেস ডায়েরী অথবা অ্যাপ ব্যবহার করুন এবং আপনার অগ্রগতি যাচাই করুন। 

তথ্যসূত্রঃ The Daily Star

মানসিক সুস্থতা চর্চা

আপনার শারীরিক ফিটনেস এর পাশাপাশি মানসিক সুস্থতা ও অনেক গুরুত্বপূর্ণ। সেজন্য নিয়মিত শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম মাইন্ড ফুলনেস প্র্যাকটিস মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে।প্রতিদিন ১০-১৫ মিনিট শান্ত পরিবেশে বসে, আপনার শ্বাসের উপর মনযোগ দিন এবং মাইন্ডফুল ইয়োগা, তাই চি, বা কি গং-এর মত ব্যায়াম করুন যা আপনার মন অথবা শরীরের সংযোগ বাড়াবে। মানসিক সুস্থতা চর্চা করলে আপনার টেনশন কমবে, মানুষের শক্তি বাড়ে এবং ঘুমের মান উন্নত হয়। শারীরিক স্বাস্থ্য ও ভালো হয়।

তথ্যসূত্রঃ প্রথম আলো, Vail Health

কি খেলে শরীর ফিট থাকে বিজ্ঞানসম্মত উপায়

বর্তমান জীবনে সুস্থ থাকা চ্যালেঞ্জিং হয়ে দাঁড়িয়েছে কিন্তু আপনি যদি সঠিক জ্ঞান এবং নিয়ম মেনে চলেন তাহলে শারীরিক এবং মানসিকভাবে ফিটনেস অর্জন করা খুব একটা অসম্ভব ব্যাপার নয়। বিজ্ঞান আমাদের বলে আপনি শারীরিক সক্রিয়তা এবং পুষ্টিকর খাদ্য ও মানসিক যত্নের সমন্বয়ে সুস্থ ও জীবনচক্র গড়ে তুলতে পারবেন।তাহলে চলুন, কি খেলে আমাদের শরীর হেড থাকবে সে সম্পর্কে ১০ টি বিজ্ঞানসম্মত উপায় দেখে নেওয়া যাক। 

প্রোটিন সমৃদ্ধ খাদ্যভ্যাস

প্রোটিন কে আরেক ভাষায় শরীরের বিল্ডিং ব্লক বলা হয়। লিউসিনসহ অপরিহার্য অ্যামিনো এসিড আপনার পেশি গঠন এবং মেরামতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে।একজন প্রাপ্তবয়স্কদের প্রতিদিন ০.৮-১.৭ গ্রাম/কেজি প্রোটির প্রয়োজন। একজন বাংলাদেশি মানুষ হিসেবে খাদ্য তালিকায় বিশেষ করে ডাল ( মসুর এবং ছোলা ) মাছ যেমনঃ ইলিশ, রুই ও ডিম এবং সয়াবিন তেল ইত্যাদি থেকে পাওয়া যায়। 

তাছাড়া আরেকটি গবেষণায় দেখা যায় ব্যায়ামের পর ২০ গ্রাম প্রোটিন গ্রহণ করলে পেশি ১৯২% বাড়ে।এছাড়া আমাদের গ্রাম অঞ্চলের কাঁচা কলা, মাছের ঝোল এবং শহরের খাদ্য তালিকায় স্প্রাউটস সালাদ (এক ধরনের সালাদ যা মূলত মুগ ডাল, ছোলা অথবা মটর ইত্যাদি দিয়ে তৈরি করা হয়) প্রোটিনের চাহিদা মেটাতে পারে। আমাদের পল্লী অঞ্চলের নারীরা ডালের বড়া এবং পায়েস তৈরি করে যা পুষ্টির ঘাটতি পূরণ করতে সাহায্য করে। আপনাকে মনে রাখতে হবে অতিরিক্ত প্রাণিজ প্রোটিন আপনার কিডনির জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। 

ভিটামিন এবং খনিজের ভারসাম্য

ভিটামিন ডি আপনার হাড়ের স্বাস্থ্য ঠিক রাখতে সাহায্য করে। সপ্তাহে ৩ দিন এবং ১৫ মিনিট সকালে রোদে হাঁটলে ৮০% চাহিদা পূরণ হয়। আয়রনের অভাবে বাংলাদেশ ৪২% নারী অ্যানেমিয়ায় ভোগেন, যা পালং শাক এবং কচু পাতার রস দিয়ে পূরণ সম্ভব। জিংক সমৃদ্ধ তিলের ডালনা এবং ভিটামিন সি যুক্ত আমলকি আপনার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। 

এছাড়া মৌসুমী ফল যেমন কামরাঙ্গা (১০০ গ্রামে ৩৪.৪ ভিটামিন সি) ও শুটকি মাছ। ক্যালসিয়ামের জন্য  ফর্টিফাইড লবণ ( এমন এক ধরনের লবণ যার মধ্যে অতিরিক্ত পুষ্টি উপাদান যেমন আয়োডিন, আয়রন ইত্যাদি মেশানো থাকে ) ব্যবহার করতে পারেন। 

জটিল কার্বোহাইড্রেট এর প্রাধান্য

সাদা ভাতের পরিবর্তে লাল চাল এবং গমের রুটি আপনার রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে।ঢেঁড়স প্রতি ১০০ গ্রামে ৩.২ গ্রাম ফাইবার এবং বার্লি ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য অত্যন্ত উপকারী। গবেষণায় দেখা যায় জটিল কার্বোহাইড্রেট গ্রহনে টাইপ-২ ডায়াবেটিস ঝুঁকি ২১% কমে যায়। 

এ ছাড়া ঐতিহ্যবাহী খাবার যেমন পান্তা ভাতের সাথে মরিচ ভর্তা বা খিচুড়িতে জব যোগ করে গ্লাইসেমিক ইনডেক্স গ্লাইসেমিক ইনডেক্স ( এমন এক ধরনের পরিমাপক পদ্ধতি যা দেখায় কোন খাবার খাবার পর সেটি রক্তে গ্লুকোজ এবং মাত্রা কত দ্রুত এবং কতটা বাড়ায় ) কমানো যায়। বাংলাদেশী নাস্তায় চিড়া মুড়ির সাথে ডাল এবং শাকসবজি যোগ করে পুষ্টিগুণ বাড়ানো সম্ভব। 

স্বাস্থ্যকর চর্বির নির্বাচন করুন

আপনি অলিভ অয়েল এর পরিবর্তে সস্তা বিকল্প হিসেবে সরিষার তেল ( ওমেগা ৩ সমৃদ্ধ ) ব্যবহার করা যেতে পারে। এছাড়া তিলের বীজ এবং সিয়া সিড স্মুদিতে ( মানে হল ঘন এবং মসৃণ পানিও যা মূলত ফল, দুধ, দুই, পানি অথবা জুস মিশিয়ে ব্লেন্ড করে তৈরি করা হয় ) যোগ করে ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড এর চাহিদা মেটানো যায়। তাছাড়া একটি গবেষণায় দেখা যায় সপ্তাহে ২ বার তৈলাক্ত মাছ খেলে আপনার হৃদরোগে ঝুঁকি ৩৬ % কমে যায়। এ ছাড়া ডুই ফ্রাইয়ের ( মানে এক ধরনের সুস্বাদু এবং
জনপ্রিয় রেসিপি যা সাধারণত মুরগির মাংস দিয়ে তৈরি করা হয় ) পরিবর্তে স্টিমিং ( এক ধরনের রান্নার পদ্ধতি যেখানে খাবার বাষ্প দিয়ে রান্না করা হয়। এখানে গরম পানি করে তার বাসবে খাবার রান্না করা হয় ) ও বেকিং ( এক ধরনের রান্নার পদ্ধতি যেখানে খাবার আদ্র এবং শুষ্কতা পেয়ে রান্না করা হয় ওভেনে ) পদ্ধতির চর্বির ক্ষতিকর প্রভাব কমায়। নারীকেলের নাড়ু অথবা তিলের খাজা তৈরি করে আপনি স্বাস্থ্যকর স্ন্যাক্স বানাতে পারেন।

আঁশযুক্ত খাবারের প্রয়োজনীয়তা

আপনি পেয়ারা থেকে প্রতি ১০০ গ্রামে ৫.৪ গ্রাম ফাইবার এবং খোসা সহ আলু কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। এছাড়া গবেষণায় দেখা যায় উচ্চ আঁশযুক্ত খাবার কোলন ক্যান্সারে ঝুঁকি ৪০% কমাতে সাহায্য করে। অপরদিকে ডুমুরের মোরব্বা ও বেলের শরবত আপনার পেটের জন্য স্বাস্থ্যকর। এছাড়া গ্রামীণ মহিলাদের তৈরি খই ও চিড়ায় হয়েছে প্রাকৃতিক আঁশ। 

নিয়মিত হাইড্রেশন কেন গুরুত্বপূর্ণ

আপনি তরমুজ থেকেই ৯২ % পানি ও শশা দৃশ্যে ইলেকট্রোলাইট ভারসাম্য বজায় রাখে। অপরদিকে ডাবের পানি যারা অ্যাথলেট রয়েছে তাদের জন্য প্রাকৃতিক স্পোর্টস ড্রিংক হিসেবে কাজ করে। এছাড়া গবেষণায় দেখা যায় ২% শরীরের পানি হারালে ১০% শারীরিক কর্ম ক্ষমতা কমে। আমাদের বাংলাদেশে অনেকেই চা কফি দিয়ে দিন শুরু করেন যা ডিহাইড্রেশন বাড়ায়। আপনি এর পরিবর্তে তুলসী পুদিনার শরবত অথবা গুড় লেবুর পানি পান করলে বেশি উপকারিতা পাবেন। 

ধূমপান এবং মদ্যপান বর্জন করুন

বাংলাদেশে ধূমপানের সংখ্যা ২২.৩% এবং মৃত্যুর হার বছরে ১ লাখ ২৬ হাজার। গোল জর্দা ব্যবহারের মুখের ক্যান্সারের ঝুঁকি ৮ গুণ বৃদ্ধি পায়। সেজন্য আপনি যদি চান শরীর ফিট থাকুক তাহলে এসব নেশা জাতীয় দ্রব্য থেকে নিজেকে বিরত রাখুন। 

প্রাকৃতিক উপায়ে শরীর ফিট রাখার ১০ টি গোপন টিপস

প্রাকৃতিক উপায়ে শরীর ফিট রাখার গোপন টিপস নিয়ে আজকের প্রতিবেদনে আলোচনা করব। আমাদের প্রকৃতির কোলে লুকিয়ে রয়েছে স্বাস্থ্য রক্ষার অমূল্য রহস্য।আমরা অনেকেই আধুনিক জীবন যাত্রার চাপে প্রায়ই ভুলে যায় আমাদের পূর্বপুরুষেরা প্রাকৃতিক উপাদানকে কাজে লাগিয়ে সুস্থ থাকতেন। সেগুলো আমরা অনেকেই জানিনা অথবা জানলেও পালন করার চেষ্টা করি না। এর ফলে আমাদের নানা ধরনের শারীরিক সমস্যা হয়ে থাকে। তাহলে চলুন প্রাকৃতিক উপায়ে শরীর ফিট রাখার ১০ গোপন টিপস দেখে নেওয়া যাক।

আয়ুর্বেদিক দিন চর্চা অনুসরণ

আপনি সূর্যোদয়ের আগে ঘুম থেকে উঠুন এবং পানি পান করুন। এটি আপনার লিভার ডিটক্স করে রক্তের অম্লত্ব নিয়ন্ত্রণ করে। এছাড়া মুখে তিলের তেল অথবা নারিকেল তেল দিয়ে ১০ মিনিট কুলি করুন এতে করে আপনার দাঁতের বাড়ি মজবুত আমার পাশাপাশি মুখের দুর্গন্ধ দূর হবে। আপনি রোজ সন্ধ্যায় শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম করুন।গবেষণায় দেখা যায়, আপনি যদি এটি নিয়মিত করেন তাহলে ফুসফুসের ক্ষমতা 30% বাড়ে এবং স্ট্রেস হরমোন কর্টিসল ২৫% কমে যায়।

তথ্যসূত্রঃ প্রথম আলো

ঋতু অনুযায়ী খাদ্যাভ্যাস

তরমুজ, ডাবের পানি এবং পুদিনার শরবত ইত্যাদি প্রাকৃতিক ORS (অরাল রিহাইড্রেশন সলিউশন)  হিসেবে কাজ করে। এছাড়া কালোজিরা মধু মিশ্রণ ১ চামচ কালোজিরা গুঁড়ো + ১ চামচ মধু প্রতিদিন সকালে আপনি এটি সেবন করুন। এটি হাঁপানি রোগীদের জন্য ফুসফুসের কার্যকারিতা ৪০% বাড়ায়। 

তথ্যসূত্রঃ প্রথম আলো

দেশীয় ভেষজের ব্যবহার

আপনি ৫ টী নিমপাতা ও আধা চা চামচ কাঁচা হলুদ বেটে খালি পেটে খান। আমেরিকান জার্নাল অফ ট্রপিক্যাল মেডিসিনের গবেষণা থেকে জানা যায় এই মিশ্রণ ম্যালেরিয়া পরজীবী ধ্বংসে ৭০% কার্যকর। এছাড়া আপনি সকালে খালি পেটে ৩০ মিলি এলোভেরা জুস পান করুন। এটি আপনার পাকস্থলীর আলসার সারানোর পাশাপাশি ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। 

তথ্যসূত্রঃ জাগো নিউজ, প্রথম আলো

প্রাকৃতিক ব্যায়াম পদ্ধতি

আপনি প্রতিদিন সকালে খালিপায়ে নরম মাটি অথবা ঘাসে 15 মিনিট হাটুন। চাইনিজ মেডিসিন জার্নাল এর তথ্য অনুযায়ী এটি আপনার পায়ের একু প্রেশার পয়েন্ট সক্রিয় করে হৃদ স্পন্দন নিয়ন্ত্রণ করে। এছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা বলছে আপনি যদি খেলাধুলা করেন তাহলে হাড়ের ঘনত্ব ১৮% বৃদ্ধি পায়। 

তথ্যসূত্রঃ ঢাকা পোস্ট, প্রথম আলো

প্রাকৃতিক পানীয় কেন প্রয়োজনীয়

আপনি রাতে ১ গ্লাস পানিতে ১ চামচ তোকমা এবং আধা চা চামচ মৌরি ভিজিয়ে রাখুন।সকালে ছেকে পান করুন এটি আপনার হজম শক্তি বাড়ানোর পাশাপাশি অতিরিক্ত চর্বি কমাতে সাহায্য করবে। এছাড়া ১ গ্লাস গরম পানিতে ১ চা চামচ গুড় এবং অর্ধেক লেবুর রস মিশিয়ে পান করুন এটি আপনার রক্ত পরিষ্কার করে এবং হিমোগ্লোবি ২ গ্রাম পর্যন্ত বাড়াতে সাহায্য করে। 

তথ্যসূত্র: সময় টিভি, প্রথম আলো

প্রকৃতির সাথে সংযোগ

আপনি সপ্তাহে অন্তত ২ বার গাছপালা ঘেরা জায়গায় ৩০ মিনিট কাটান। এডিথ কাওয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা থেকে জানা যায় এটি ডিপ্রেশন ৩২% এবং রক্তচাপ 12% কমায়।এছাড়া আপনি প্রতিদিন 15 মিনিট হাত দিয়ে মাটি স্পর্শ করুন কারণ মাটির উপকারী ব্যাকটেরিয়া সেরোটোনিন হরমোন উৎপাদনে সাহায্য করে

তথ্যসূত্রঃ প্রথম আলো, The Skin Cancer Foundation

প্রাকৃতিক ঘুমের সহায়ক

আপনি জিরা, ধনিয়া ও মৌরি সমান পরিমাণে মিশিয়ে গরম পানিতে সিদ্ধ করুন। এটি ঘুমানোর এক ঘণ্টা আগে পান করুন এতে করে আপনার গভীর ঘুমের সময় ৪০% বাড়ে। ঘুমানোর আগে ১ টি পাকা কলার সাথে ১ চামচ তিল খান কারণ কলার ম্যাগনেসিয়াম পেশি শিথিল করে ও তিলের ক্যালসিয়াম হাড় মজবুত করে। 

তথ্যসূত্রঃ হাভার্ড হেলথ, প্রথম আলো

প্রক্রিয়াজাত খাবার বর্জন করুন

আপনি সাদা চালের বদলে লাল চাল অথবা জব বা বাজরা ( এটি একটি স্বাস্থ্যকর শস্য এবং পুষ্টিতে পূর্ণ যা সাদা চালের তুলনায় অনেক বেশি স্বাস্থ্যকর ) খান। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের তথ্য অনুযায়ী এসব শস্য ও রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রণে ৩৫ % বেশি কার্যকর ভূমিকা রাখে। এছাড়া আপনি সাদা চিনির বদলে খেজুর গুড় অথবা আখের গুড় ব্যবহার করুন। কারন এতে অবস্থিত আয়রন রক্তস্বল্পতা দূর করে এবং জিংক আপনার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। 

তথ্যসূত্রঃ জাগো নিউজ, প্রথম আলো

দেশীয় ফলমূলের ব্যবহার

আপনি প্রতিদিন পঞ্চাশ মিলির কামরাঙ্গার রস পান করুন কারণ এতে অবস্থিত উচ্চ ভিটামিন সি আপনার কিডনি স্টোন গলাতে সাহায্য করে। অন্যদিকে শুকনো ডুমুর ভিজিয়ে রেখে সকালে খান। এটি আপনার হাড়ের জোড়ায় লুব্রিকেন্ট তৈরিতে সাহায্য করে এবং বাতের ব্যথা ৫০ কমায়। 

তথ্যসূত্রঃ বিবিসি বাংলা, প্রথম আলো

সামাজিক স্বাস্থ্যচর্চা আমাদের জন্য কেন প্রয়োজনীয়

আপনি সপ্তাহে একদিন প্রতিবেশীদের নিয়ে সম্মিলিত যোগব্যায়াম অথবা হাঁটার আয়োজন করুন।একটি গবেষণা থেকে দেখা যায় গ্রুপ এক্সারসাইজ ব্যক্তিগত চর্চার চেয়ে ৬০% বেশি কার্যকর ভূমিকা রাখে। এছাড়া আপনি নিমপাতা, নারিকেল খোসা ও তুলসী পাতার সিদ্ধ পানি দিয়ে স্নান করুন। এটি আপনার ত্বকের ব্যাকটেরিয়া ইনফেকশন ৮০% কমাতে সাহায্য করে। 

তথ্যসূত্রঃ রেনিক্স কেয়ার, প্রথম আলো

ব্যক্তিগত মতামতঃ শরীর ফিট রাখার 10 টি উপায়

শরীর ফিট রাখার 10 টি উপায় সম্পর্কে হয়তো আপনারা আর্টিকেলটি পড়ার মাধ্যমে কিছুটা হলেও ধারণা পেয়েছেন। জীবনের শেষ সময় অব্দি আপনি যদি সুস্থ এবং সুন্দর জীবন যাপন করতে চান তাহলে এ সমস্ত ব্যায়ামের কোন তুলনা নেই। আপনাদের কাছে যে ব্যায়ামগুলো সহজ মনে হয় সেগুলো দিয়ে প্রথমে শুরু করুন। প্রথমেই আপনারা অনেক বেশি দায়িত্ব নিয়ে নিবেন না।

আস্তে আস্তে শুরু করুন। কারণ হঠাৎ করে অনেক টাইপের ব্যায়াম করলে আপনার শরীরের সেটি অ্যাডজাস্ট হতে নাও পারে। আজকের মত এখানেই শেষ করছি, ইনশাল্লাহ পরবর্তী কোন আর্টিকেলে আবার কথা হবে। দোয়া করি সে পর্যন্ত ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন। আর অবশ্যই শরীর ফিট রাখার 10 টি উপায় গুলো বাস্তব জীবনে মেনে চলার চেষ্টা করবেন। 

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

সব বাজ ব্লগিং ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url