ছেলেদের চুল পড়া ও খুশকি দূর করার উপায়

ছেলেদের চুল পড়া ও খুশকি দূর করার উপায় খুঁজছেন? আপনি একা নন, কারণ এই সমস্যাটি অধিকাংশ ছেলেদের জন্য একটি পরিচিত সমস্যা।  তবে আপনি যদি সঠিক উপায় অনুসরণ করেন, তাহলে সহজেই এই সমস্যার সমাধান পেতে পারেন। ছেলেদের চুলের খুশকি দূর করার উপায় খুবই সহজ, তবে প্রয়োজন কিছু নিয়মিত যত্ন এবং সঠিক প্রাকৃতিক উপাদান।



ছেলেদের-চুল-পড়া-ও-খুশকি-দূর-করার-উপায়

আপনি যদি চিরতরে খুশকি দূর করার উপায় খুঁজে থাকেন তাহলে আজকের আর্টিকেলটি আপনার জন্য। ছেলেদের চুলের খুশকি দূর করার উপায় এবং চুল পড়া নিয়ে আপনাদের জন্য কিছু আদর্শ পদ্ধতি নিয়ে হাজির হয়েছি। গুরুত্বপূর্ণ আরও তথ্য পেতে হলে আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।

পোস্ট সূচিপত্রঃ ছেলেদের চুল পড়া ও খুশকি দূর করার উপায়

ছেলেদের চুল পড়া ও খুশকি দূর করার উপায়

প্রিয় সম্মানিত পাঠক, ছেলেদের চুল পড়া ও খুশকি দূর করার উপায় সম্পর্কে আজকের আর্টিকেলের মাধ্যমে আপনাদেরকে জানাবো। চুল পড়া এবং খুশকি বর্তমান সময়ে অনেক পুরুষের জন্য একটি সাধারণ সমস্যা, যা বাহ্যিক অসৌন্দর্য বাড়ানোর পাশাপাশি মানসিক চাপের কারণও হতে পারে। হয়তো আপনি বিভিন্ন প্রতিকার চেষ্টা করেছেন, কিন্তু সঠিক তথ্যের অভাবে সেগুলো কার্যকর হয়নি। এর মূল কারণ হতে পারে অনিয়মিত খাদ্যাভ্যাস, স্ট্রেস বা ভুল হেয়ার কেয়ার পদ্ধতি। সঠিক খাদ্য, প্রাকৃতিক তেল এবং নিয়মিত যত্নের মাধ্যমে আপনি এই সমস্যা মোকাবেলা করতে পারেন। আসুন, ছেলেদের চুল পড়া ও খুশকি দূর করার উপায় দেখে নেওয়া যাক। 

কোমল চুলের যত্নে করণীয়

প্রিয় পাঠক, চুলের যত্ন নেওয়ার সময় ধীরে ধীরে এবং কোমলভাবে কাজ করা খুব জরুরি। আমাদের দৈনন্দিন স্টাইলিং, শ্যাম্পু ব্যবহার থেকে শুরু করে সব কিছুই চুলের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে প্রভাব ফেলে।

  • চুল আঁচড়ানোর সময় যদি আপনি কোমল হাতে কাজ করেন এবং প্রাকৃতিক আঁশের ব্রাশ ব্যবহার করেন, তবে চুলের স্বাভাবিক তেল বজায় থাকে, যা চুলকে নমনীয় ও জীবন্ত রাখে।
  • তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। হেয়ার ড্রায়ার বা স্ট্রেইটনার ব্যবহার করার সময় হিট প্রোটেকশন স্প্রে ব্যবহার করুন এবং কম তাপে কাজ করুন। এতে চুলে অতিরিক্ত তাপ কম পড়বে এবং চুলের প্রোটিন কাঠামো (চুলের শক্তিশালী গঠন) ঠিক থাকবে।
  • চুল মোছার সময়, টাওয়েলের পরিবর্তে মাইক্রোফাইবার টাওয়েল বা টি-শার্ট দিয়ে হালকাভাবে চাপ দিন। এর ফলে ঘষাঘষি না হবে, কারণ এতে চুলের গোড়া দুর্বল হতে পারে।
  • পরবর্তী টিপস হল, খুব টানটান করে চুল বাঁধা হেয়ারস্টাইল যেমনঃ পনিটেইল বা বান এড়িয়ে চলুন। এতে চুলের গোড়ায় অতিরিক্ত টান পড়ে এবং চুল পড়ার ঝুঁকি বাড়ে।
  • আরেকটি বিষয়, রাসায়নিক ট্রিটমেন্ট যেমন ব্লিচিং বা কালার করিয়ে চুলের প্রোটিন কাঠামো দুর্বল হয়ে যেতে পারে। তাই, যদি সম্ভব হয়, এগুলি থেকে বিরত থাকুন।
  • আপনি প্রতি রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে একটি হেয়ার মাস্ক ব্যবহার করুন। সপ্তাহে অন্তত একবার স্ট্রেংথেনিং মাস্ক দিলে চুল আরও মজবুত ও উজ্জ্বল হবে।

স্ক্যাল্পের অথবা খুলির যত্ন নিতে হবে

চুলের যত্নে স্ক্যাল্প বা খুলির গুরুত্ব অপরিসীম। একটা সুস্থ স্ক্যাল্প থেকেই চুলের সুস্থতা শুরু হয়। তাই আসুন, একসাথে কিছু সহজ ও প্রাকৃতিক টিপস দেখে নিই। 

  • নিয়মিত স্ক্যাল্প ম্যাসাজঃ আপনারা জানেন, নিয়মিত ম্যাসাজ করলে স্ক্যাল্পে রক্ত সঞ্চালন (রক্ত প্রবাহ) বাড়ে এবং হেয়ার ফলিকল – অর্থাৎ চুলের গোড়া – পুষ্টি পায়। গবেষণায় বলা হয়েছে, এটি চুলের ঘনত্ব বাড়াতেও সহায়ক। তাই, সপ্তাহে কয়েকবার বা প্রতিদিন একটু করে ম্যাসাজ করলে আপনি নিজের চুলে নতুন প্রাণ নিয়ে আসতে পারবেন।
  • স্ক্যাল্প পরিষ্কার রাখুনঃ চুল পড়া রোধে স্ক্যাল্পের পরিচ্ছন্নতা (খুলি বা মাথার ত্বক পরিষ্কার রাখা) অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অতিরিক্ত তেল বা ময়লা জমলে হেয়ার ফলিকল বাধাগ্রস্ত হতে পারে। তাই, মৃদু ক্লিনজিং শ্যাম্পু ব্যবহার করে নিয়মিত স্ক্যাল্প পরিষ্কার রাখুন, যাতে আপনার খুলির পরিবেশ সবসময় সতেজ এবং স্বাস্থ্যকর থাকে।
  • স্ক্যাল্প এক্সফোলিয়েশনঃ স্ক্যাল্পে জমে থাকা মৃত কোষগুলো বের করে নেওয়া খুবই জরুরি। সপ্তাহে একবার প্রাকৃতিক স্ক্রাব ব্যবহার করে খুলির মৃত কোষ দূর করতে পারেন। এতে করে স্ক্যাল্পে নতুন কোষ জন্মাতে সাহায্য করবে এবং চুল আরও স্বাস্থ্যবান হবে।
  • সূর্যের অতিরিক্ত রোদ থেকে রক্ষাঃ চুলের যত্নে একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো, অতিরিক্ত সূর্যের ক্ষতিকর রোদ থেকে স্ক্যাল্প (মাথার ত্বক)কে সুরক্ষা দেওয়া। যখন বাইরে থাকবেন, টুপি বা ছাতা ব্যবহার করে খুলিকে সুরক্ষিত রাখুন। এতে স্ক্যাল্প পুড়ে যাওয়ার আশঙ্কা কমে যাবে এবং চুল পড়ার ঝুঁকি হ্রাস পাবে।
  • প্রদাহ কমাতে চা গাছের তেলঃ যদি আপনার স্ক্যাল্পে কখনও কোনো প্রদাহ (সুগন্ধি বা প্রদাহজনক অবস্থার লক্ষণ) দেখা দেয়, তাহলে হালকা চা গাছের তেল (Tea Tree Oil) দিয়ে ম্যাসাজ করতে পারেন। তবে, তেলের ব্যবহার শেষে অবশ্যই ভালোভাবে ধুয়ে ফেলুন, যাতে তেলের অবশিষ্টাংশ থেকে কোনো সমস্যা না হয়।
  • তেল দিয়ে হালকা ম্যাসাজঃ আপনার স্ক্যাল্প যদি একটু শুষ্ক বা উত্তেজিত মনে হয়, তাহলে সপ্তাহে একবার নারকেল, জৈতুন বা আরগান তেল দিয়ে সরাসরি হালকা ম্যাসাজ করুন। এটি স্ক্যাল্পকে হাইড্রেট (ভেজা) রাখবে, তবে তেল ব্যবহারের পর পরিষ্কার করে নিন, যাতে চুলে অতিরিক্ত তেল না থাকে।
এই সহজ এবং প্রাকৃতিক টিপসগুলো অনুসরণ করে আপনি নিশ্চয়ই আপনার স্ক্যাল্পে এবং চুলে নতুন জীবন যোগ করবেন। মনে রাখবেন, প্রতিটি ছোট পদক্ষেপই বড় পরিবর্তনের কারণ হতে পারে।

সঠিক হেয়ার প্রোডাক্ট নির্বাচন

আপনার চুলের ধরন অনুযায়ী সঠিক পণ্য নির্বাচন করা সত্যিই গুরুত্বপূর্ণ। আপনি যদি ভুল পণ্য ব্যবহার করেন তাহলে চুল আরও বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারে। সেজন্য সঠিক হেয়ার প্রোডাক্ট নির্বাচন করা অত্যন্ত জরুরী। 

  • বায়োটিন যুক্ত শ্যাম্পুঃ আপনারা যদি মনে করেন চুলের বৃদ্ধিতে একটু দেরি হচ্ছে বা চুল পাতলা দেখাচ্ছে, তাহলে বায়োটিন যুক্ত শ্যাম্পু ব্যবহার করতে পারেন। এটি চুলের বৃদ্ধিতে সহায়ক বলে প্রমাণিত হয়েছে, ঠিক যেন আপনার চুলে নতুন প্রাণ ফিরে আসছে। 
  • কঠোর ডিটারজেন্ট ও রাসায়নিক যুক্ত শ্যাম্পু এড়িয়ে চলুনঃ আপনারা খেয়াল রাখবেন, যে শ্যাম্পুগুলোতে অধিক রাসায়নিক থাকে, সেগুলো আপনার স্ক্যাল্পের প্রাকৃতিক তেল (যা চুলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ) কে তুলে ফেলে। এর ফলে, স্ক্যাল্প শুকনো হয়ে যায় এবং চুল দুর্বল হয়। তাই, প্রাকৃতিক উপাদানে তৈরি এমন পণ্য ব্যবহার করার চেষ্টা করুন। 
  • সালফেট-মুক্ত শ্যাম্পুঃ সালফেট মুক্ত শ্যাম্পু গুলো আপনার চুলের প্রাকৃতিক তেল বজায় রাখতে সাহায্য করে। আপনারা লক্ষ্য করবেন, এতে চুলে প্রাকৃতিক নমনীয়তা ফিরে আসে, যা চুলকে আরো স্বাস্থ্যবান করে তোলে।
  • খুশকি-প্রতিরোধী শ্যাম্পুঃ আপনার স্ক্যাল্পে খুশকি না থাকলেও, নিয়মিত খুশকি-প্রতিরোধী শ্যাম্পু ব্যবহার করলে স্ক্যাল্প সবসময় স্বাভাবিক ও সতেজ থাকে। এটি আপনার স্ক্যাল্পকে স্বাস্থ্যবান রাখার একটি ভালো উপায়।
  • প্রোটিন-সমৃদ্ধ কন্ডিশনারঃ প্রোটিন হলো চুলের শক্তি। তাই, প্রোটিন-সমৃদ্ধ কন্ডিশনার ব্যবহারের মাধ্যমে আপনারা চুলকে আরও মজবুত করে তুলতে পারেন। এতে আপনার চুলে প্রাকৃতিক উজ্জ্বলতা ফিরে আসে।
  • ভলিউমাইজিং সিরামঃ আপনার চুল যদি পাতলা বা বেঁকে বেঁকে দেখায়, তবে ভলিউমাইজিং সিরাম ব্যবহার করে দেখতে পারেন। এই সিরাম চুলকে উঠিয়ে রাখে এবং ঘন দেখায়। তবে, একটি বিষয় খেয়াল রাখতে হবে প্রোডাক্ট লাগানোর আগে নিশ্চিত হয়ে নিন যে, স্ক্যাল্প সম্পূর্ণ শুকনো আছে কিনা যাতে প্রোডাক্ট ঠিকভাবে কাজ করতে পারে।

খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন করুন 

আপনার চুলের স্বাস্থ্য ও বৃদ্ধির জন্য পুষ্টিকর খাদ্যাভ্যাস অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নিচে কিছু বাস্তবভিত্তিক নির্দেশনা দেওয়া হলো, যা আপনি সহজেই অনুসরণ করতে পারেন। 

  • ডিম খানঃ ডিম হলো বায়োটিন ও প্রোটিনের উৎকৃষ্ট উৎস। এটি চুলের শক্তি বাড়ায় এবং চুলের বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। যেন, আপনি প্রতিদিন একটু করে এনার্জি পান এবং চুলও থাকে শক্তিশালী ও সুস্থ।
  • সবুজ শাকসবজি খানঃ পালং শাকসহ সবুজ শাকসবজি খেলে আপনি পাবেন ভিটামিন A, C এবং আয়রন। এই উপাদানগুলো চুলকে আরও মজবুত ও উজ্জীবিত করে, ঠিক যেন তারা নতুন জীবন লাভ করছে।
  • তৈলাক্ত মাছ খানঃ সালমন বা অন্যান্য তৈলাক্ত মাছ খান। এতে থাকা ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড ও প্রোটিন চুলের বৃদ্ধিতে সরাসরি ভালো প্রভাব ফেলে। এটি চুলে এক ধরনের জীবন্ত ও শক্তিশালী প্রভাব আনে, যা চুলকে আরও সুস্থ এবং সজীব করে তোলে।
  • আভোকাডো খানঃ আভোকাডো খেলে স্ক্যাল্পে রক্ত সঞ্চালন বাড়ে, যা চুলের বৃদ্ধিকে সহায়তা করে। এটি এমন যেন আপনার চুলে একটি প্রাকৃতিক উজ্জ্বলতা ফিরে আসছে।
  • বাদাম ও বীজ খানঃ বাদাম, বীজ ও নাট থেকে পাওয়া জিঙ্ক চুল পড়া কমাতে অনেক উপকারী। এগুলো আপনাদের চুলকে সুস্থ ও খোলখোলা করে তোলে, যেন প্রতিদিন এক নতুন হাসি ফুটে ওঠে চুলে।
  • গাজর ও মিষ্টি আলু খানঃ গাজর ও মিষ্টি আলুতে থাকা বিটা ক্যারোটিন আপনার চুলের স্বাস্থ্যকে আরও উন্নত করে। এটি চুলের প্রতি প্রকৃতির এক দান, যা আপনাদেরকে স্বাভাবিক সৌন্দর্য প্রদান করে।
  • পানি পানঃ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, পর্যাপ্ত পানি পান করুন প্রতিদিন অন্তত ৮ গ্লাস। চুলও তো পানি চায়, আর হাইড্রেশন থাকলে চুল শুষ্ক বা ভঙ্গুর হয়ে পড়ার আশঙ্কা কমে যায়।

মেডিকেল ট্রিটমেন্ট   

যদি উপরের প্রাকৃতিক পদ্ধতিগুলো কার্যকর না হয়, তাহলে আপনি চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী মেডিকেল ট্রিটমেন্ট বিবেচনা করতে পারেন। এখানে কয়েকটি সাধারণ ও বাস্তবপরিস্থিতির চিকিৎসা পদ্ধতি তুলে ধরা হলো

  • মিনোক্সিডিল (Minoxidil, রোগেইন): এটি একটি ওভার-দ্য-কাউন্টার (কোন প্রেসক্রিপশন ছাড়াই পাওয়া যায় এমন) লোশন বা ফোম, যা স্ক্যাল্পে প্রয়োগ করা হয়। এটি স্ক্যাল্পে রক্ত প্রবাহ বাড়ায় এবং চুলের বৃদ্ধি উদ্দীপিত করে। সাধারণত, এটি দিনে দুইবার ব্যবহার করা হয়।
  • মিনোক্সিডিল (Minoxidil, রোগেইন): এটি একটি ওভার-দ্য-কাউন্টার (কোন প্রেসক্রিপশন ছাড়াই পাওয়া যায় এমন) লোশন বা ফোম, যা স্ক্যাল্পে প্রয়োগ করা হয়। এটি স্ক্যাল্পে রক্ত প্রবাহ বাড়ায় এবং চুলের বৃদ্ধি উদ্দীপিত করে। সাধারণত, এটি দিনে দুইবার ব্যবহার করা হয়।
  • ফিনাস্টেরাইড (Finasteride, প্রোপেসিয়া): এটি একটি প্রেসক্রিপশন ওষুধ, যা DHT (ডাইহাইড্রোটেস্টোস্টেরোন) নামক হরমোনের মাত্রা কমায়, যা চুল পড়ার জন্য দায়ী। এটি শুধুমাত্র পুরুষদের জন্য অনুমোদিত, তাই ব্যবহারের আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিৎ।
  • PRP (প্লাটলেট-রিচ প্লাজমা) থেরাপিঃ এই চিকিৎসায় আপনার নিজের রক্ত থেকে প্লাটলেট সমৃদ্ধ প্লাজমা সংগ্রহ করে তা স্ক্যাল্পে ইনজেকশন দেওয়া হয়। এতে চুলের বৃদ্ধিতে সহায়ক প্রভাব পড়ে।
  • হেয়ার ট্রান্সপ্লান্ট সার্জারিঃ যখন অন্যান্য চিকিৎসা পদ্ধতির মাধ্যমে যথেষ্ট ফলাফল পাওয়া না যায়, তখন মাথার পিছনের অংশ থেকে চুল সংগ্রহ করে টাক পড়া স্থানে প্রতিস্থাপন করা হয়।
মনে রাখবেন, কোন ধরনের মেডিকেল ট্রিটমেন্ট শুরু করার আগে অবশ্যই একজন ডার্মাটোলজিস্ট (চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ) এর সাথে পরামর্শ করুন। আপনারা সঠিক চিকিৎসা পরিকল্পনা গ্রহণ করলে ধীরে ধীরে চুলের সমস্যার উন্নতি দেখতে পাবেন। 

মানসিক চাপ কমানো

আপনারা যদি লক্ষ্য করে থাকেন যে, মানসিক চাপের কারণে চুল পড়া শুরু হয়েছে, তাহলে নিচের সহজ কৌশলগুলো অনুসরণ করতে পারেন। 

  • নিয়মিত ব্যায়ামঃ হালকা হাঁটা বা ব্যায়াম করলে শরীরে স্ট্রেস হরমোন কমে যায় এবং মানসিক শান্তি বৃদ্ধি পায়। এতে শরীর ও মন দুটোই ভালো থাকে।
  • যোগব্যায়াম ও মেডিটেশনঃ ডাউনওয়ার্ড ফেসিং ডগ এবং নিলিং পোজ এর মত ব্যায়াম ও ধ্যান করলে মানসিক চাপ অনেকটা কমে যায়। এটি শরীরকে শিথিল করে এবং মনকে শান্ত রাখে।
  • পর্যাপ্ত ঘুমঃ প্রতিদিন ৭-৮ ঘণ্টা ঘুম নিশ্চিত করলে শরীর ও মন দুটোই সতেজ থাকে এবং চাপ কমে।
  • আরামদায়ক মাসাজঃ মাথা ও ঘাড়ে নরম মাসাজ করলে মাংসপেশী শিথিল হয় এবং চাপ কমে, যা চুলের স্বাস্থ্যেও ইতিবাচক প্রভাব ফেলে।
  • নিজের জন্য সময়ঃ অল্প সময়ের জন্য কোনো কিছু এমনভাবে করা যা আপনার ভালো লাগে বা আপনি উপভোগ করেন। এছাড়া বন্ধুদের সাথে কথা বলা বা প্রকৃতির মাঝে হাঁটাহাঁটি আপনার মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করবে এবং আপনাকে আরও ভালো অনুভব করাবে।

খুশকি দূর করার উপায়

খুশকি বা ড্যানড্রাফ আমাদের সকলের জন্য একটি পরিচিত সমস্যা, যেখানে মাথার ত্বক থেকে শুষ্ক, সাদা ফ্লেক (ছোট ছোট খোসা) পড়ে, যা অনেক সময় চুলকানি ও অস্বস্তি তৈরি করে। বিশেষ করে কালো পোশাক পরলে, এ ফ্লেকগুলো চোখে পড়ে সহজেই, যা কখনো কখনো অস্বস্তিকর অনুভূতি হতে পারে। আসুন, একসাথে জানি কেন এই সমস্যা ঘটে এবং কিভাবে আমরা সঠিক যত্নের মাধ্যমে এর থেকে মুক্তি পেতে পারি।

খুশকি প্রতিরোধী শ্যাম্পু ব্যবহার

আজ আমি আপনাদের সাথে খুশকি প্রতিরোধের জন্য সঠিক শ্যাম্পু বেছে নিতে সাহায্য করবো। আমাদের মাথার ত্বকে অনেক সময় খুশকি দেখা দেয়, আর এর সমাধান যেমন সহজ, তেমনি কার্যকর।

  • জিঙ্ক পাইরিথিয়ন যুক্ত শ্যাম্পুঃ এটি অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল এবং অ্যান্টিফাঙ্গাল হিসেবে কাজ করে, যা স্ক্যাল্পের ব্যাকটেরিয়া এবং ছত্রাকের সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে। উদাহরণস্বরূপ, হেড অ্যান্ড শোল্ডার্স বা ডিএইচএস জিঙ্ক।
  • সেলেনিয়াম সালফাইড যুক্ত শ্যাম্পুঃ এটি ছত্রাক প্রতিরোধী এবং স্ক্যাল্পের কোষ পুনর্গঠন ধীর করে। উদাহরণস্বরূপ, সেলসান ব্লু বা হেড অ্যান্ড শোল্ডার্স ইনটেনসিভ।
  • কোল টার যুক্ত শ্যাম্পুঃ এটি স্ক্যাল্পের কোষ মৃত্যুকে ধীর করে, যা স্ক্যাল্পের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। উদাহরণস্বরূপ, নিউট্রোজেনা টি/জেল বা স্ক্যাল্প ১৮ কোল টার শ্যাম্পু।
  • কেটোকোনাজোল যুক্ত শ্যাম্পুঃ এটি একটি শক্তিশালী অ্যান্টিফাঙ্গাল এজেন্ট হিসেবে কাজ করে, যা চুলের সমস্যার জন্য কার্যকর। উদাহরণস্বরূপ, নিজোরাল।
  • স্যালিসাইলিক এসিড যুক্ত শ্যাম্পুঃ এটি স্ক্যাল্পের খোসা অপসারণ করে, যা স্ক্যাল্পের পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে। উদাহরণস্বরূপ, নিউট্রোজেনা টি/এসএল।
আপনারা, প্রথমে একটি শ্যাম্পু দিয়ে চেষ্টা করুন। যদি ৪-৬ সপ্তাহ পরও কোনো উন্নতি না দেখতে পান, তাহলে অন্য শ্যাম্পু ব্যবহার করে দেখুন। অনেক সময়, আমি দেখতে পাই যে, এক ধরণের শ্যাম্পুর কার্যকারিতা কমে যায়। তাই দুই-তিন ধরনের শ্যাম্পু পালাক্রমে ব্যবহার করা ভালো।

শ্যাম্পু ব্যবহারের সঠিক পদ্ধতি

আপনারা যখন শ্যাম্পু ব্যবহার করবেন, কিছু সহজ কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ নিয়ম মাথায় রাখা দরকার। প্রথমেই, চুল ভালো করে ভিজিয়ে নিন যাতে শ্যাম্পু সহজে কাজ করতে পারে। শ্যাম্পু নেওয়ার পর, দয়া করে লেবেলটা ভালো করে পড়ে দেখুন, কারণ বেশিরভাগ শ্যাম্পু স্ক্যাল্পে ৫-১০ মিনিট রেখে দেওয়ার নির্দেশ থাকে। আপনারা ধীরে ধীরে আঙ্গুলের ডগা দিয়ে স্ক্যাল্পে হালকা ম্যাসাজ করুন। মনে রাখবেন, নখ দিয়ে চাপ দিলে ত্বকে ক্ষতি হতে পারে। এখন চুলের ধরনের উপর নির্ভর করে শ্যাম্পু ব্যবহারের পরিমাণ ঠিক করুন।

  • সোজা বা তৈলাক্ত চুলের জন্য সপ্তাহে ২-৩ বার মেডিকেটেড শ্যাম্পু ব্যবহার করুন, অন্য দিনগুলোতে সাধারণ শ্যাম্পু ব্যবহার করতে পারেন।
  • আর কোঁকড়ানো বা শুষ্ক চুলের ক্ষেত্রে, সপ্তাহে একবার মেডিকেটেড শ্যাম্পু যথেষ্ট এবং ২-৩ দিন শ্যাম্পু করা থেকে বিরত থাকুন।
শ্যাম্পু করার পর, চুলকে কোমলভাবে মুছে নিন এবং স্বাভাবিকভাবে শুকতে দিন। যদি ড্রায়ার ব্যবহার করতে হয়, তবে কম তাপমাত্রায় ব্যবহার করুন যাতে চুলের উপর কোনো অতিরিক্ত প্রভাব না পড়ে। 

খাদ্যাভ্যাস ও লাইফস্টাইল পরিবর্তন

আপনি যদি খুশকি নিয়ন্ত্রণ করতে চান তাহলে খাদ্যভ্যাস এবং লাইফস্টাইল পরিবর্তন করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। খুশকি নিয়ন্ত্রণে যে সমস্ত খাবার খাওয়া যেতে পারে তা হল।

  • প্রোবায়োটিক সমৃদ্ধ খাবার (যেমন: দই, কিমচি)।
  • ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড সমৃদ্ধ খাবার।
  • ভিটামিন বি-সমৃদ্ধ খাবার।
  • চিনি ও প্রক্রিয়াজাত খাবার কম খান।
  • পর্যাপ্ত পানি পান করুন।
  • ধূমপান ত্যাগ করুন।
  • মানসিক চাপ কমান।

কখন ডাক্তারের পরামর্শ নেবেন

আপনি বাড়িতে যত্ন নিলে খুশকি বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সামলানো যায়। তবে মাঝে মাঝে কিছু লক্ষণ দেখলেই ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত। আপনি যদি লক্ষ্য করেন --

  • ড্যানড্রাফ শ্যাম্পু ব্যবহার করার পরেও ৪-৬ সপ্তাহের মধ্যে উন্নতি না দেখা যায়। 
  • চুলকানি বা খুশকি আরও বেড়ে যায়।
  • স্ক্যাল্প (মাথার ত্বক) লাল বা ফোলা হয়ে যায়।
  • ভ্রু, নাকের ভাঁজ, কান এমনকি শরীরের অন্য কোনো অংশেও লাল ও খোসা উঠতে শুরু করে অথবা দীর্ঘদিন ধরে গুরুতর খুশকির সমস্যা দেখা দেয়।
তবে দয়া করে দেরি করবেন না। আপনারা কোন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের কাছে যান। তাঁরা প্রেসক্রিপশন স্ট্রেংথ শ্যাম্পু (বিশেষ শক্তিশালী শ্যাম্পু) বা টপিক্যাল স্টেরয়েড লোশন (ত্বকের উপর ব্যবহৃত শক্তিশালী ক্রিম) প্রেসক্রাইব করতে পারেন, এবং কিছু ক্ষেত্রে ওরাল মেডিকেশন (মুখের মাধ্যমে খাওয়া ওষুধ)ও প্রয়োজন হতে পারে। বিশেষ করে যখন খুশকি সেবোরিক ডার্মাটাইটিস (এক ধরনের ত্বকের রোগ যা চুলের অংশে হয়), সোরিয়াসিস (চর্মরোগ যা চুলের স্বাস্থ্যকে প্রভাবিত করে) বা অন্য কোনো স্ক্যাল্পজনিত সমস্যা এর লক্ষণ দেখা দেয়।

চুল পড়ার পেছনে আসল কারণগুলো জানুন

চুল পড়া একটি সাধারণ সমস্যা যা বিশ্বজুড়ে কোটি কোটি মানুষের জীবনকে প্রভাবিত করে। প্রতিদিন ৫০ থেকে ১০০টি চুল পড়া স্বাভাবিক হলেও, এর চেয়ে বেশি পড়লে তা চিন্তার কারণ হতে পারে। চুল কেবল শারীরিক সৌন্দর্যের অংশই নয়, এটি আমাদের আত্মবিশ্বাস এবং সামাজিক পরিচয়েরও গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। চুল পড়ার পেছনে বংশগত কারণ, হরমোনাল পরিবর্তন, মানসিক চাপ, পুষ্টির অভাব, রোগ, ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া এবং পরিবেশগত প্রভাবসহ বিভিন্ন কারণ থাকতে পারে। এই কারণগুলো সম্পর্কে ভালোভাবে জানা এবং বুঝে সঠিক প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা ও চিকিৎসা নেওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যাতে আমরা সঠিক সমাধানে পৌঁছাতে পারি।

জেনেটিক ফ্যাক্টর এবং চুল পড়ার প্রকৃত কারণ

চুল পড়ার সবচেয়ে সাধারণ কারণ হল অ্যান্ড্রোজেনেটিক অ্যালোপেশিয়া, যা পুরুষদের মধ্যে মেল প্যাটার্ন বল্ডনেস এবং মহিলাদের মধ্যে ফিমেল প্যাটার্ন হেয়ার লস হিসেবে পরিচিত। এখন হয়তো বা আপনার মনে প্রশ্ন আসতে পারে, মেল প্যাটার্ন বল্ডনেস আবার কি? সহজ ভাবে বললে পুরুষদের মধ্যে চুল পড়ার একটি বিশেষ ধরনের সমস্যা, যা সাধারণত বংশগত এবং হরমোনাল কারণে হয়। এটি সাধারণত পুরুষদের মাথার উপরের অংশে চুলের লাইন সরে যাওয়া এবং শেষে মাথার মাঝখানে পুরো চুল পড়ে যাওয়ার পরিস্থিতি সৃষ্টি করে।

অপরদিকে ফিমেল প্যাটার্ন হেয়ার লস হচ্ছে মহিলাদের মধ্যে চুল পড়ার আরেকটি সাধারণ সমস্যা। এটি পুরুষদের চুল পড়ার মতো নয়, তবে মহিলাদের মাথার উপরের অংশে বা মাথার মাঝখানে চুল পাতলা হতে শুরু করে। গবেষণায় দেখা গেছে, পুরুষদের ৮০% এবং মহিলাদের ৫০% এই ধরনের চুল পড়ায় আক্রান্ত হয়। বয়স বাড়ার সাথে সাথে এবং জেনেটিক কারণে চুলের ফলিকলগুলি ডাইহাইড্রোটেস্টোস্টেরন (DHT) নামক হরমোনের প্রতি অতিসংবেদনশীল হয়ে পড়ে। DHT চুলের ফলিকল সংকুচিত করে, যা চুলকে ছোট, পাতলা এবং দুর্বল করে তোলে।

এই জিনগত প্রবণতা প্রায়ই পরিবারের মধ্যে দেখা যায়, এবং গবেষণায় দেখা গেছে, এর বংশগত হার ০.৮১ শতাংশ। যা পরিবারের মধ্যে এই ধরনের চুল পড়ার প্রবণতা প্রমাণ করে। এটি একটি পলিজেনিক বৈশিষ্ট্য, অর্থাৎ এটি একাধিক জিন দ্বারা প্রভাবিত। বিশেষ করে অ্যান্ড্রোজেন রিসেপ্টর (AR) জিন এবং ৫ আলফা রিডাক্টেজ জিনের পরিবর্তন অ্যান্ড্রোজেনেটিক অ্যালোপেশিয়া তে প্রভাব ফেলে। এছাড়াও, X ক্রোমোজোমের AR জিন এবং ইকটোডিসপ্লাসিন A2 রিসেপ্টর (EDAR2) জিনের মধ্যে সম্পর্কও পাওয়া গেছে।

হরমোনাল ভারসাম্যহীনতা ও চুল পড়ার কারণ

আমরা সবাই জানি হরমোনাল ভারসাম্যহীনতা চুল পড়ার একটি প্রধান কারণ, বিশেষ করে পুরুষ হরমোন অ্যান্ড্রোজেন এবং এর ডেরিভেটিভ ডাইহাইড্রোটেস্টোস্টেরন (DHT) (এটি একটি হরমোন যা টেস্টোস্টেরন নামক পুরুষ হরমোন থেকে তৈরি হয়) চুল পড়ার সাথে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত। আমরা পুরুষদের মধ্যে দেখতে পাই যে, টেস্টোস্টেরন পাঁচ আলফা রিডাক্টেজ এনজাইমের মাধ্যমে DHT তে রূপান্তরিত হয়। DHT চুলের ফলিকলের অ্যান্ড্রোজেন রিসেপ্টরের সাথে বাঁধা পড়ে এবং ফলিকল সংকুচিত হয়ে চুল ছোট, পাতলা ও দুর্বল হয়ে যায়।

মহিলাদের ক্ষেত্রে মেনোপজ (মহিলাদের মাসিক বন্ধ হওয়া), গর্ভাবস্থা বা জন্মনিয়ন্ত্রণ পিল ব্যবহারের ফলে হরমোনের ভারসাম্য ভেঙে যায়, যেমন এস্ট্রোজেন (মহিলাদের প্রধান হরমোন) ডমিনেন্স থেকে টেস্টোস্টেরন (পুরুষ হরমোন) ও প্রোজেস্টেরনের (অপর একটি মহিলা হরমোন) ভারসাম্য ঠিক থাকেনা। তাছাড়া, থাইরয়েড হরমোনের পরিবর্তন (থাইরয়েড গ্রন্থি থেকে উৎপন্ন হরমোনের সমস্যা) যেমন হাইপোথাইরয়েডিজম (থাইরয়েডের কার্যক্ষমতা কমে যাওয়া) বা হাইপারথাইরয়েডিজম (থাইরয়েডের অতিরিক্ত কাজ করা) ও চুল পড়ার অন্যতম কারণ হয়ে থাকে।

মানসিক চাপ ও চুল পড়ার প্রভাব

আমাদের জীবনে সময়ে সময়ে নানা ধরণের চাপ আসে। কখনো শারীরিক অসুস্থতা, বড় অপারেশন বা সংক্রমণের কারণে এবং কখনো কর্মক্ষেত্রে চাপ, পারিবারিক সমস্যা কিংবা অজানা দুশ্চিন্তা ও বিষণ্ণতা (মনোযোগের অভাব বা হতাশা) কারণে আমরা মানসিকভাবে ক্লান্ত হয়ে পড়ি। দীর্ঘদিন ধরে এই চাপ আমাদের শরীরের অনেক প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করে, যার মধ্যে অন্যতম হলো চুল পড়ার সমস্যা। Harvard University-এর এক গবেষণায় দেখা গেছে, দীর্ঘস্থায়ী স্ট্রেস আমাদের দেহের

সিম্পাথেটিক নার্ভাস সিস্টেম (শরীরের এমন একটি সিস্টেম যা বিপদের সময়ে আমাদের দেহকে প্রস্তুত রাখে) কে সক্রিয় করে, যা মেলানোসাইট স্টেম সেল (চুলের জন্য দায়ী কোষ) কে ক্ষয় করে দেয়। এর ফলে চুলের নতুন বৃদ্ধিতে বাধা সৃষ্টি হয়। তদুপরি, স্ট্রেস হরমোন কর্টিসল (দেহে চাপ বা উদ্বেগের প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করা হরমোন) আমাদের চুলের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান যেমন হাইয়ালুরোনান (এক ধরনের প্রাকৃতিক উপাদান যা চুলের স্বাস্থ্য বজায় রাখে) ও প্রোটিওগ্লাইকান (চুলের ফলিকল গঠনে সহায়ক প্রোটিন) কে ভেঙে দেয়, যা স্বাভাবিক ফলিকল গঠনে সহায়তা করে।

এছাড়াও, স্ট্রেস-সম্পর্কিত চুল পড়া সাধারণত টেলোজেন এফ্লুভিয়াম (এটি একটি চুল পড়ার সমস্যা, যেখানে চুল সাধারণত অপ্রত্যাশিতভাবে বৃদ্ধি বন্ধ হয়ে) নামে পরিচিত। এতে, স্ট্রেসের কারণে চুলের কিছু অংশ অপ্রত্যাশিতভাবে বৃদ্ধি বন্ধ হয়ে এবং পরে ২-৩ মাস পর সেই চুলগুলো পড়তে শুরু করে। তবে আশ্চর্যের বিষয় হলো, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এই ধরনের সমস্যা নিজের মধ্যেই সমাধান হয়ে যায়, এবং চুল পুনরায় আগের মতো বাড়তে শুরু করে।

একটি গবেষণায় দেখা গেছে, বিশেষ করে পরীক্ষার সময়ের স্ট্রেস T হেল্পার টাইপ ১ সেলের (দেহের একটি কোষ যা ইমিউন সিস্টেমের অংশ) বৃদ্ধি ঘটায়, যা চুলের স্বাভাবিক বৃদ্ধি বাধাগ্রস্থ করে এবং এপিথেলিয়াল সেলের অ্যাপোপটোসিস (দেহের কোষের স্বাভাবিক মৃত্যু প্রক্রিয়া) এর মাধ্যমে ক্ষতি করে। তাই, প্রিয় পাঠক, যদি আপনারা এই ধরনের চাপ অনুভব করেন, তাহলে কিছুটা শান্ত থাকার এবং নিজের যত্ন নেওয়ার চেষ্টা করুন। সময় মতো বিশ্রাম ও প্রয়োজনে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া হতে পারে সঠিক সমাধান।

পুষ্টির অভাবে চুল পড়া

আমাদের শরীরকে সুস্থ রাখতে প্রতিটি পুষ্টি উপাদান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। চুল, যা মূলত প্রোটিন এবং কেরাটিন দিয়ে তৈরি। চুলের সুস্থতা বৃদ্ধির জন্য পর্যাপ্ত পুষ্টি অত্যন্ত জরুরি। পুষ্টির অভাব হলে, চুল পড়া শুরু হতে পারে। তাহলে চলুন কোন পুষ্টির অভাবে সাধারণত চুল পড়ে থাকে তা দেখে নেওয়া যাক। 

  • আয়রনঃ এটি এমন একটি উপাদান যা আমাদের চুলের বৃদ্ধিকে শক্তিশালী করে। এটি ডিএনএ সংশ্লেষণে (কোষের প্রতিলিপি তৈরি) সহায়তা করে, যা চুলের গঠন এবং বৃদ্ধি নিশ্চিত করে। পৃথিবীজুড়ে আয়রনের অভাব সবচেয়ে বেশি দেখা যায়, এবং এটি চুল পড়ার অন্যতম কারণ হতে পারে। বিশেষ করে টেলোজেন এফ্লুভিয়াম (চুল পড়ার একটি সমস্যা যেখানে চুল অপ্রত্যাশিতভাবে বিশ্রাম অবস্থায় চলে যায় এবং পরে কয়েক মাস পর পড়ে যায়)। কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, TMPRSS6 নামক জিনের পরিবর্তন (মিউটেশন) আয়রনের অভাবের সঙ্গে সম্পর্কিত, আর সঠিক আয়রন চিকিৎসায় এই ধরনের চুল পড়া অনেকাংশে ঠিক করা যেতে পারে।
  • জিঙ্কঃ এটি আপনার চুলের টিস্যু বৃদ্ধিতে সাহায্য করে এবং চুলের ফলিকলের অয়েল গ্রন্থিগুলির কার্যকারিতা নিয়ন্ত্রণ করে। আপনি লক্ষ্য করবেন, ছোট খাটো পুষ্টির অভাবও চুলের স্বাস্থ্যকে দুর্বল করে দিতে পারে।
  • বায়োটিন বা ভিটামিন বিঃ যদিও এটি অনেক খাবারে পাওয়া যায় এবং অন্ত্রের ব্যাকটেরিয়া (পেটের জীবাণু) দ্বারা উৎপাদিত হয়, এর অভাবও কখনো কখনো চুল পড়ার কারণ হতে পারে। 
  • ভিটামিন ডিঃ  ভিটামিন ডি রিসেপ্টর (VDR) এর মিউটেশন (প্রোটিনের পরিবর্তন) চুল পড়ার কারণ হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, অ্যালোপেশিয়া অ্যারিয়াটা (চুল পড়ার একটি রোগ যেখানে মাথার কিছু অংশে চুল পড়ে যায়) রোগীদের মধ্যে প্রায়শই ভিটামিন ডি'র মাত্রা কম পাওয়া যায়। আরেকটি বিষয় আপনাদেরকে জানিয়ে রাখি তা হল অতিরিক্ত ভিটামিন এ চুল পড়ার কারণ হতে পারে। 

চুল পড়ার মেডিকেল কারণ

আজ আমরা চুল পড়ার কিছু মেডিকেল কারণ নিয়ে সহজ ভাষায় আলোচনা করবো, যেন আপনি এক বন্ধুর সাথে বসে কথা বলছেন। তাহলে চলুন, দেখে নেওয়া যাক চুল পড়ার কিছু মেডিকেল কারণ সমূহ।

  • অ্যালোপেশিয়া অ্যারিয়াটাঃ এটি একটি অটোইমিউন রোগ, যেখানে আপনার ইমিউন সিস্টেম (দেহের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার অংশ) চুলের ফলিকল (চুলের গোড়া) আক্রমণ করে। এর ফলে, মাথা, ভ্রু বা চোখের পাতায় ছোট ছোট টাক দেখা দেয়।
  • থাইরয়েড সমস্যাঃ হাইপোথাইরয়েডিজম (থাইরয়েড গ্রন্থির কম কাজ) এবং হাইপারথাইরয়েডিজম (থাইরয়েড গ্রন্থির অতিরিক্ত কাজ) এই দুই ধরনের থাইরয়েড সমস্যা চুলের বৃদ্ধি চক্রকে (চুলের গঠন এবং বৃদ্ধি প্রক্রিয়া) প্রভাবিত করে এবং চুল পড়ার কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
  • সিস্টেমিক লুপাস এরিথেমাটোসাসঃ লুপাস নামে এক অটোইমিউন রোগও চুল পড়ার সাথে জড়িত। এই রোগে আপনার শরীরের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা দেহের নিজস্ব অংশকে আক্রমণ করতে শুরু করে, যার ফলে চুল পড়া হতে পারে।
  • ট্রাইকোটিলোম্যানিয়াঃ এই মানসিক অবস্থায় ব্যক্তি বারবার নিজের চুল টানে বা ছিঁড়ে ফেলে, যার কারণে চুল পড়ে যায়। চিকিৎসায় মূলত এই মানসিক অবস্থাকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে হয়।
  • ট্রাইকোরেক্সিস নোডোসাঃ যদি চুলের শ্যাফ্টে (চুলের মূল অংশ) দুর্বলতা থাকে, তাহলে আঘাত বা অতিরিক্ত হেয়ার স্টাইলিং (চুল সাজানোর পদ্ধতি) এবং হেয়ার প্রোডাক্ট (চুলের যত্নের পণ্য) ব্যবহারে চুল ভেঙে যায়, যাকে ট্রাইকোরেক্সিস নোডোসা বলা হয়।

ঔষধের বিভিন্ন রকমের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া

আপনারা নিশ্চয়ই জানেন যে, আমাদের শরীরে যে ওষুধগুলো কাজ করে, সেগুলোর কিছু প্রভাব মাঝে মাঝে চুল পড়ার সমস্যাও তৈরি করতে পারে। যেমন, ক্যান্সার চিকিৎসায় ব্যবহৃত কেমোথেরাপি ওষুধ, বিশেষ করে ডক্সোরুবিসিন (অ্যাড্রিয়ামাইসিন), চুলের ফলিকলের মাইটোটিক কার্যকলাপ (চুলের গঠন এবং বৃদ্ধি প্রক্রিয়া) বাধাগ্রস্ত করে। এই প্রক্রিয়াকে আমরা অ্যানাজেন এফ্লুভিয়াম বলে জানি।

তদুপরি, কিছু অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট যেখানে লিথিয়াম থাকে ও চুল পড়ার সাথে জড়িত। একইভাবে, উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে ব্যবহৃত বিটা-ব্লকারও এবং রক্ত পাতলা করার ওষুধ, যেমন ওয়ারফারিন ও হেপারিন, কখনো কখনো চুলের স্বাভাবিক বৃদ্ধিতে বাধা সৃষ্টি করে।আরও কিছু ওষুধ যেমন, অ্যাম্ফেটামাইন (যা ADHD চিকিৎসায় ব্যবহৃত), লেভোডোপা (যা পার্কিনসন্স রোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত) এবং

আইসোট্রেটিনয়েন (অ্যাকনের জন্য ব্যবহৃত) এসব ওষুধগুলির ব্যবহারে অনেক সময় চুল পড়ার সমস্যা দেখা দিতে পারে। দীর্ঘমেয়াদে স্টেরয়েড ও অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের ক্ষেত্রেও এই সমস্যা দেখা দিতে পারে। প্রিয় বন্ধু, যদি আপনারা এসব ওষুধ গ্রহণের পর চুল পড়ার সমস্যা অনুভব করেন, তাহলে দয়া করে আপনার চিকিৎসকের সাথে আলোচনার মাধ্যমে সঠিক পরামর্শ নেওয়ার চেষ্টা করুন। আমাদের প্রত্যেকের শরীর আলাদা এবং সঠিক যত্ন নেওয়া খুব জরুরি।

খুশকি হওয়ার কারণগুলো কি হতে পারে

খুশকি শুধুমাত্র মাথার ত্বকের সাময়িক অস্বস্তি নয় বরং এটি আমাদের শরীরের অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক প্রক্রিয়ার একটি ফল। অনেকে মনে করেন, শুধুমাত্র শ্যাম্পু কম করলেই খুশকি হয়, কিন্তু আসলে, এতে বিভিন্ন কারণ জড়িয়ে আছে। আমাদের স্ক্যাল্পে থাকা Malassezia (এক ধরনের ছত্রাক), অতিরিক্ত তেলের উৎপাদনকারী সিবাম গ্রন্থি (তেলের গ্রন্থি) এবং পরিবেশের চাপে পরিবর্তিত ইমিউন সিস্টেম (শরীরের রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থা) এর প্রতিক্রিয়া

এই তিনটি মিলেই খুশকির সমস্যা তৈরি করে। শীতের শুষ্কতা, গ্রীষ্মের ঘাম, মানসিক চাপ এবং ভিটামিনের ঘাটতির (যখন শরীরে পর্যাপ্ত ভিটামিন থাকে না) মতো বিষয়গুলোও এই সমস্যা আরও বাড়িয়ে দিতে পারে। সহজভাবে বলতে গেলে, আমাদের স্ক্যাল্পে প্রকৃতির বিভিন্ন উপাদানের সমন্বয়ে খুশকি তৈরি হয়। আসুন, আমরা একে অপরকে বোঝার চেষ্টা করি এবং নিজেদের যত্ন নিতে শুরু করি, যেন এই সমস্যাটি সহজেই সামলানো যায়। 

খুশকি সৃষ্টির বৈজ্ঞানিক কারণ

খুশকি আমাদের মাথার ত্বকের প্রাকৃতিক প্রক্রিয়ার সাথে গভীরভাবে জড়িত। গবেষণায় দেখা গেছে, অনেক ক্ষেত্রে Malassezia নামের এক ধরনের ইস্ট বা ছত্রাক এর অতিরিক্ত বৃদ্ধি এই সমস্যার মূল কারণ। এই ছত্রাকটি স্বাভাবিকভাবে আমাদের স্ক্যাল্পে শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করে, কিন্তু যখন পরিবেশ, ত্বকের তেল বা মানসিক চাপের মতো বিশেষ শর্ত পূর্ণ হয়, তখন এটি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। এই অতিরিক্ত বৃদ্ধি খুশকি, চুলকানি এবং অন্যান্য অস্বস্তির সৃষ্টি করে।

Malassezia ছত্রাকের অতিসক্রিয়তা

Malassezia globosa এবং Malassezia restricta নামের এই দুই প্রজাতির ছত্রাক আমাদের স্ক্যাল্পে থাকা প্রাকৃতিক তেল বা সিবাম (scalp oil) কে ভেঙে ওলিক অ্যাসিড উৎপন্ন করে। এই ওলিক অ্যাসিড যখন ত্বকের উপরের স্তরে প্রবেশ করে, তখন তা প্রদাহ সৃষ্টি করে, যার ফলে ত্বকের কোষগুলো দ্রুত মারা যায় এবং খোসা আকারে ঝরে পড়ে। গবেষণার মতে, প্রায় ৫০% মানুষের ত্বক এই ওলিক অ্যাসিডের প্রতি খুবই সংবেদনশীল, যা খুশকির প্রবণতাকে আরও বাড়িয়ে দেয়। কিছু ক্ষেত্রে, এই সংবেদনশীলতা জিনগত কারণে আরও স্পষ্ট হয়ে ওঠে।

সিবাম গ্রন্থির অতিসক্রিয়তা

আপনারা হয়ত লক্ষ্য করেছেন, পুরুষদের মধ্যে খুশকি খুবই সাধারণ। এর এক কারণ হচ্ছে অ্যান্ড্রোজেন (পুরুষ হরমোন) হরমোনের প্রভাবে সিবাম গ্রন্থি (তেল উৎপাদনকারী গ্রন্থি) বেশি কার্যকরী হয়ে ওঠে। এই গ্রন্থি যা তেল তৈরি করে, সেটাই Malassezia ছত্রাকের জন্য প্রধান খাদ্য। তাই, যখন আপনার স্ক্যাল্পে তেলের পরিমাণ বাড়ে, তখন সেই ছত্রাকও বাড়তে শুরু করে, যার ফলে খুশকি দেখা দেয়।

কিশোর বয়সে হরমোনাল পরিবর্তন (হরমোনের মাত্রার পরিবর্তন) কিংবা মানসিক চাপ বা স্ট্রেস (মানসিক চাপ) এর কারণে সিবাম উৎপাদন বাড়তে পারে। এই অতিরিক্ত তেল সেই ছত্রাকের বৃদ্ধিকে আরও উৎসাহ দেয়, ফলে খুশকির প্রবণতা বাড়ে। এই কারণেই পুরুষদের মধ্যে খুশকি সমস্যা সাধারণত বেশি লক্ষ্য করা যায়।

ত্বকের অস্বাস্থ্যকর পিএইচ ব্যালেন্স

আমাদের মাথার ত্বকের স্বাভাবিক পিএইচ মাত্রা সাধারণত ৪.৫ থেকে ৫.৫ এর মধ্যে থাকে, যা আমাদের স্ক্যাল্পকে ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া ও ছত্রাকের আক্রমণ থেকে রক্ষা করে। কিন্তু হার্ড শ্যাম্পু (অতিরিক্ত শক্তিশালী শ্যাম্পু), রাসায়নিকজাত হেয়ার প্রোডাক্ট (রাসায়নিক উপাদানে তৈরি চুলের পণ্য) বা খুব গরম পানি ব্যবহার করলে এই পিএইচ ব্যালেন্স (তেল ও অম্লের ভারসাম্য) নষ্ট হয়ে যায়। ফলে, আমাদের স্ক্যাল্পের প্রাকৃতিক প্রতিরক্ষা দুর্বল হয়ে পড়ে এবং Malassezia ছত্রাকের বিস্তার সহজ হয়ে যায় যা খুশকি সৃষ্টি করতে সাহায্য করে।

ইমিউন সিস্টেমের অস্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া

কখনো কখনো আমাদের ইমিউন সিস্টেম (রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা) ভেবে নেয় যে স্ক্যাল্পের কোষগুলো আক্রমণের যোগ্য শত্রু, তাই তারা ভুলবশত এগুলোকে আক্রমণ করে।এভাবেই সোরিয়াসিস (এক ধরনের ত্বকের রোগ), একজিমা (ত্বকের প্রদাহ), বা সেবোরিক ডার্মাটাইটিস (ত্বকের তেল গ্রন্থির রোগ) এর মতো রোগে

ত্বকের কোষগুলো খুব দ্রুত বৃদ্ধি পেয়ে স্তূপাকারে জমা হয়ে যায়, যা দেখতে খুশকির মতো মনে হয়। আরও কিছু ক্ষেত্রে, যেমন এইচআইভি, পারকিনসন্স ডিজিজ (এক ধরনের স্নায়ুরোগ) অথবা কেমোথেরাপি (ক্যান্সার চিকিৎসার পদ্ধতি) নেওয়া রোগীদের ক্ষেত্রে, ইমিউন সিস্টেম (রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা) দুর্বল থাকায় এই সমস্যা আরও তীব্র হয়ে ওঠে। 

পরিবেশগত ও জীবনযাপন সংক্রান্ত কারণ

শীতকালে যখন বাতাসের আর্দ্রতা কমে যায়, তখন আমাদের মাথার ত্বক শুষ্ক হয়ে পড়ে এবং খুশকির সমস্যা বাড়তে দেখা যায়। এতে ত্বকের প্রাকৃতিক সুরক্ষা দুর্বল হয়ে যায়। আপনারা লক্ষ্য করবেন, অপর্যাপ্ত পানি পান, অথবা ভিটামিন বি, জিঙ্ক (একটি খনিজ) ও ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিডের (প্রাকৃতিক চর্বি যা শরীরের জন্য উপকারী) ঘাটতির কারণে ত্বকের স্বাস্থ্য ক্ষতিগ্রস্ত হতে থাকে। আরও খেয়াল রাখার বিষয় হল যখন আমরা অতিরিক্ত আল্ট্রাভায়োলেট রশ্মি (UV ray) বা দূষণের (pollution) সংস্পর্শে আসি, তখন আমাদের ত্বকের কোষগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এর ফলে কোষগুলো দ্রুত মরে যায়, এবং ঝরে পড়ার হার বাড়ে, যার কারণে খুশকি আরও বেড়ে যায়।

মানসিক চাপ ও হরমোনাল পরিবর্তন

দীর্ঘমেয়াদি মানসিক চাপ বা ক্রনিক স্ট্রেস আমাদের শরীরের একমাত্র চ্যালেঞ্জ নয় এটি আমাদের ত্বকেরও সমস্যা সৃষ্টি করে। যখন আমরা স্ট্রেসে থাকি, তখন কর্টিসল হরমোন (স্ট্রেস হরমোন) এর মাত্রা বাড়ে, যা আমাদের স্ক্যাল্পের সিবাম উৎপাদন (ত্বকের তেল তৈরি) বাড়িয়ে দেয়। ফলে, অতিরিক্ত তেল জমে এবং সেই তেল থেকেই খুশকির সমস্যা বাড়ে।

এছাড়াও, গর্ভাবস্থা, মেনোপজ (মহিলাদের হরমোনের পরিবর্তনকাল), বা থাইরয়েড ডিসঅর্ডার (থাইরয়েডের সমস্যা) এর মতো অবস্থায় হরমোনের ওঠানামা (হরমোনের পরিবর্তন) খুশকির প্রকোপ আরও বাড়িয়ে দিতে পারে। গবেষণায় দেখা যায়, যারা নিয়মিত মেডিটেশন (ধ্যান) বা যোগব্যায়াম (শারীরিক ও মানসিক প্রশান্তির জন্য) করেন না, তাদের মধ্যে এই সমস্যা বেশি দেখা যায়।

ভুল হেয়ার কেয়ার রুটিন

আমাদের স্ক্যাল্পের যত্ন নিতে গেলে শ্যাম্পু ব্যবহারের মাত্রায় ছোটখাটো খেয়াল রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিদিন শ্যাম্পু না করা বা অতিরিক্ত শ্যাম্পু করা উভয়ই আমাদের জন্য ক্ষতিকর। কম শ্যাম্পু করলে স্ক্যাল্পে অতিরিক্ত তেল ও মৃত কোষ জমে যায়, যা ছত্রাকের বংশবৃদ্ধির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। 

তবে বেশি শ্যাম্পু করলে ত্বকের প্রাকৃতিক তেল হারিয়ে যায়, যার ফলে ত্বক শুষ্ক হয়ে পড়ে। এছাড়াও, সিলিকন, প্যারাবেন বা সালফেটযুক্ত প্রোডাক্ট ব্যবহার করলে ত্বকের ছিদ্র বন্ধ হয়ে যেতে পারে এবং প্রদাহ দেখা দেয়। তাই, আমাদের উচিত পছন্দের হেয়ার প্রোডাক্ট সঠিকভাবে বেছে নেওয়া এবং পরিমিত শ্যাম্পু ব্যবহার করে নিজের স্ক্যাল্পকে সুস্থ রাখা।

চিরতরে খুশকি দূর করার ঘরোয়া উপায়

খুশকি আমাদের মাথার ত্বকে একটি সাধারণ সমস্যা, যা বিভিন্ন কারণে সৃষ্টি হয়। টেস্টোস্টেরন বা শ্যাম্পুর রাসায়নিক প্রভাবের কারণে স্ক্যাল্পে অতিরিক্ত তেল জমে, যা ছত্রাকের বৃদ্ধি ঘটায় এবং খুশকি সৃষ্টি করে। তবে, আপনার রান্নাঘরের মসলার র‍্যাকে লুকিয়ে রয়েছে এই সমস্যার সমাধান। নিমের অ্যান্টিসেপ্টিক গুণ, দইয়ের ময়েশ্চারাইজিং প্রভাব, অ্যালোভেরার শান্তিদায়ক ছোঁয়া এবং মেথির শক্তি মিশিয়ে আপনি সহজেই প্রাকৃতিকভাবে খুশকির বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারেন। বৈজ্ঞানিক গবেষণায় এসব উপাদানগুলি Malassezia ছত্রাকের বৃদ্ধি রোধ করতে সহায়তা করে। আসুন, এই ঘরোয়া উপায়গুলো ব্যবহার করে আমরা আবারও সুস্থ চুল ও স্ক্যাল্পের আনন্দ উপভোগ করি। 

অ্যাপল সাইডার ভিনেগার

আপনারা হয়তো আগে কখনো ভাবেননি অ্যাপল সাইডার ভিনেগার, যা শুধু সালাদ ড্রেসিং নয়, বরং আপনার স্ক্যাল্পের জন্য এক সত্যিকার সুপারহিরো! এটি আমাদের স্ক্যাল্পের পিএইচ (৪.৫-৫.৫) ফিরিয়ে আনে এবং এর মধ্যে থাকা অ্যাসেটিক অ্যাসিড Malassezia (ছত্রাক) এর বৃদ্ধি বন্ধ করে দেয়। এটি এমন এক প্রাকৃতিক উপায়, যা আপনি সহজেই ব্যবহার করে আপনার স্ক্যাল্পকে সুস্থ রাখতে পারেন। ব্যবহারের পদ্ধতি এক নজরে দেখে নিন। 

  • ২ টেবিল চামচ অ্যাপল সাইডার ভিনেগার এবং ১ কাপ পানি মিশিয়ে নিন।
  • শ্যাম্পু করার পর এই মিশ্রণটি স্ক্যাল্পে স্প্রে করুন।
  • ৫ মিনিট মৃদু ম্যাসাজ করুন, যাতে উপাদানগুলো ভালোভাবে ছড়িয়ে পড়ে।
  • শেষে ঠাণ্ডা পানি দিয়ে স্ক্যাল্প পরিষ্কার করে ধুয়ে ফেলুন।
আপনারা সপ্তাহে ২ বার এই পদ্ধতি ব্যবহার করলে ৪ সপ্তাহের মধ্যে ফলাফল দেখতে পাবেন। গবেষণায় দেখা গেছে, এটি স্ক্যাল্পের মৃত কোষ অপসারণে ৬৮% কার্যকর। তবে, যদি আপনার স্ক্যাল্পে কাটা বা ঘা থাকে, তবে ব্যবহার থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

প্রকৃতির অ্যান্টিফাঙ্গাল পাওয়ারহাউস নিম

বাংলাদেশের গ্রামে শতাব্দী ধরে নিম পাতার ব্যবহার হয়ে আসছে, কারণ এতে থাকে আজাদিরাকটিন (এক ধরনের রাসায়নিক উপাদান), যা ছত্রাকের কোষের প্রাচীর ভেঙে দিয়ে আমাদের স্ক্যাল্পের সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে। প্রকৃতির এই উপহার আমাদের চুল ও স্ক্যাল্পের যত্ন নিতে কতটা উপকারী হতে পারে চলুন দেখে নেওয়া যাক। 

  • এক মুঠো নিম পাতা নিয়ে ২ কাপ পানিতে ১৫ মিনিট ফুটিয়ে নিন, তারপর ঠাণ্ডা করে নিন। এই পানিতে চুল ধুয়ে নিন এবং প্রায় ৩০ মিনিট পর শ্যাম্পু করুন।
  • নিম পাতার পেস্টে যদি কিছুটা ভিন্নতা চান, তাহলে এতে কিছু দই (টক দই) মিশিয়ে ২০ মিনিট ধরে স্ক্যাল্পে লাগান।
একটি গবেষণায় দেখা গেছে, এই প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে ৬ সপ্তাহের মধ্যে ৮২% অংশগ্রহণকারীর খুশকি কমে গেছে। আর, নিমের তেতো গন্ধ যদি আপনাদের বিরক্ত করে, তাহলে চুল ধোয়ার পর লেবুর রস ব্যবহার করে দেখুন। এভাবে গন্ধ অনেকটাই দূর হয়ে যাবে।

কোকোনাট অয়েল প্লাস লেমন জুস

আজকের এই প্রাকৃতিক টিপসটি সত্যিই আপনাদের কাজে লাগবে। নারকেল তেলের লরিক অ্যাসিড (এক ধরনের প্রাকৃতিক চর্বি) ছত্রাকের লিপিড লেয়ার (ছত্রাকের বাইরের স্তর) ভেঙে দেয়, যা ছত্রাক ও সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সহায়ক, আর লেবুর সাইট্রিক অ্যাসিড নতুন ইনফেকশন প্রতিরোধে সাহায্য করে। আসুন, প্রস্তুত প্রণালী দেখে নেওয়া যাক। 

  • ২ টেবিল চামচ গরম নারকেল তেল ও ১ টেবিল চামচ লেবুর রস ভালো করে মিশ্রিত করুন।
  •  এই মিশ্রণটি আপনার স্ক্যাল্পে ৩০ মিনিট ধরে ম্যাসাজ করে লাগিয়ে রাতভর লাগিয়ে রাখুন।
  • সকালে মাইল্ড শ্যাম্পু (নরম শ্যাম্পু) দিয়ে চুল ভালো করে ধুয়ে ফেলুন।
এই কম্বিনেশন প্রাকৃতিকভাবে সিবাম উৎপাদন (ত্বকের তেল তৈরি) ৪০% কমায়। শুষ্ক স্ক্যাল্পের ক্ষেত্রে, আপনারা সপ্তাহে ৩ বার এই পদ্ধতি অনুসরণ করে দেখতে পারেন। 

অ্যালোভেরা জেল এর ব্যবহার

আজ আমরা অ্যালোভেরার এমন এক প্রাকৃতিক উপকারিতা নিয়ে কথা বলবো, যা আপনাদের স্ক্যাল্পের যত্নে সত্যিই কার্যকর। অ্যালোভেরায় পাওয়া অ্যানথ্রাকুইনন (এক ধরনের রাসায়নিক উপাদান) প্রদাহ কমায় এবং নতুন কোষ গজাতে সহায়ক, মানে এটি স্ক্যাল্পের উন্নত স্বাস্থ্য বজায় রাখতে সাহায্য করে। ব্যবহারের টিপস গুলো দেখে নিন। 

  • প্রথমত, তাজা অ্যালোভেরা জেল সরাসরি স্ক্যাল্পে লাগান।
  • অথবা, ১ চা চামচ মধু ও ২ চা চামচ অ্যালোভেরা জেল মিশিয়ে একটি মাস্ক তৈরি করুন এবং তা স্ক্যাল্পে লাগান।
  • এরপর, ৪৫ মিনিট রেখে চুল ধুয়ে ফেলুন।
গবেষণায় দেখা গেছে, এই পদ্ধতি স্ক্যাল্পের মাইক্রোবায়োম ভারসাম্য (ত্বকের প্রাকৃতিক ব্যালান্স) রক্ষা করে, যা ৭৩% কার্যকর প্রমাণিত হয়েছে।

মেথি বীজ এর ব্যবহার

আজকের প্রাকৃতিক হেয়ার কেয়ারের টিপসটি আপনারা খুব সহজেই বাসায় বসে তৈরি করে ব্যবহার করতে পারবেন। আজকের প্রাকৃতিক হেয়ার কেয়ারের টিপসটি আপনারা খুব সহজেই বাসায় বসে তৈরি করে ব্যবহার করতে পারেন। মেথি বীজে থাকা নিকোটিনিক অ্যাসিড (ভিটামিন বি৩-এর একটি রূপ) স্ক্যাল্পে রক্ত সঞ্চালন বাড়ায় এবং চুলের গোড়া শক্তিশালী করে। এর ফলে খুশকি, চুলকানি এবং অন্যান্য চুলের সমস্যাও ধীরে ধীরে কমে।এর প্রস্তুত প্রণালী এক নজরে দেখে নিন।

  • ২ টেবিল চামচ মেথি বীজ সারারাত ভিজিয়ে রেখে সকালে পেস্ট করে নিন।
  • পেস্টে ১ চা চামচ দই ও ১ চা চামচ মধু মিশিয়ে নিন।
  • প্যাকটি স্ক্যাল্পে লাগিয়ে প্রায় ১ ঘণ্টা রাখুন।
  • এরপর স্ক্যাল্প ভালো করে ধুয়ে ফেলুন।
গবেষণায় দেখা গেছে, সপ্তাহে ২ বার ব্যবহার করলে প্রায় ৯০% ব্যবহারকারীর চুলকানি অনেকটাই কমে গেছে।

টি ট্রি অয়েল এর গুনাগুন

আজকের এই প্রাকৃতিক চুলের যত্নের টিপসটি আপনারা খুশকি দূর করার জন্য কাজে লাগাতে পারেন। টি ট্রি অয়েল এর মধ্যে থাকা টেরপিনেন-৪-অল (এক ধরনের প্রাকৃতিক উপাদান) ছত্রাক ধ্বংস করে, যা খুশকি কমাতে সাহায্য করে। তবে, মাথায় রাখবেন, সরাসরি টি ট্রি অয়েল ব্যবহার করবেন না। তাহলে কিভাবে করবেন দেখে নিন। 

  • ২ ফোঁটা টি ট্রি অয়েল ও ২ টেবিল চামচ নারকেল তেল ভালো করে মিশিয়ে নিন।
  • এই মিশ্রণটি আপনার স্ক্যাল্পে ২০ মিনিটের জন্য ম্যাসাজ করে লাগিয়ে রাখুন।
  • এরপর চুল ধুয়ে ফেলুন।
  • আপনার শ্যাম্পুর সাথে ৫ ফোঁটা টি ট্রি অয়েল মিশিয়ে ব্যবহার করতে পারেন।
গবেষণায় দেখা গেছে, ৪ সপ্তাহে এই পদ্ধতিতে খুশকি ৪১% কমে গেছে। তবে, গর্ভবতী মহিলাদের এই পদ্ধতি থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

দই প্লাস হেনা এর কার্যকারিতা

আমরা জানি যে, দইয়ের ল্যাক্টোব্যাসিলাস (এক ধরনের উপকারী ব্যাকটেরিয়া) ব্যাকটেরিয়া আপনার স্ক্যাল্পের ভালো মাইক্রোবায়াল ব্যালেন্স (স্ক্যাল্পের প্রাকৃতিক পরিবেশ) গড়ে তোলায় সাহায্য করে, আর হেনাতে থাকা আইসোরিয়েন্টিন (প্রাকৃতিক উপাদান) অ্যান্টিফাঙ্গাল (ছত্রাকের বিরুদ্ধে কার্যকর) হিসেবে কাজ করে। এই দুই উপাদানের সমন্বয়ে আপনার স্ক্যাল্পের pH ৫.৫ এ রাখা সম্ভব হয় এবং অতিরিক্ত সিবাম (ত্বকের প্রাকৃতিক তেল) নিয়ন্ত্রণে থাকে। কীভাবে ব্যবহার করবেন

  • প্রথমে, ৩ টেবিল চামচ হেনা পাউডার ও ১/২ কাপ দই ভালোভাবে মিশিয়ে নিন।
  • এরপর, এই মিশ্রণটি আপনার স্ক্যাল্পে লাগিয়ে ৩০ মিনিট রেখে দিন।
  • শেষে, চুল ভালো করে ধুয়ে ফেলুন।
এই প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে নিয়মিত চর্চা করলে আপনার স্ক্যাল্পে স্বাস্থ্যকর পরিবেশ বজায় থাকবে এবং চুলে প্রয়োজনীয় যত্ন নিয়ে আসবে।

আপনাকে কিছু বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে


  • কোন উপাদানে এলার্জি রয়েছে সেটি টেস্ট করে নিতে হবে।
  • ৬ সপ্তাহ ব্যবহারের পরও যদি উন্নতি না দেখা যায় তাহলে ডার্মালজিস্ট দেখাতে হবে।
  • একসাথে একাধিক উপশম বা চিকিৎসা পদ্ধতি ব্যবহারের পরিবর্তে, একটি বা দুটি পদ্ধতি ব্যবহার করা উচিত। 

ব্যক্তিগত মতামতঃ ছেলেদের চুল পড়া ও খুশকি দূর করার উপায়

প্রিয় পাঠক, ছেলেদের চুল পড়া ও খুশকি দূর করার উপায় সম্পর্কে আজকের আর্টিকেলে বিস্তারিত আলোচনা করলাম। যদিও আর্টিকেলটি অনেক বড় হয়ে গিয়েছে। আপনাদের উপকারের জন্য আমি সমস্ত কিছু ভেঙে ভেঙে বলার চেষ্টা করেছি। আর্টিকেলটি পড়ার পর আপনারা কিছুটা হলেও ধারণা পাবেন বলে মনে করছি। প্রিয় পাঠক, চুল পড়া এবং খুশকি, বিশেষ করে ছেলেদের মধ্যে, একটি অত্যন্ত সাধারণ সমস্যা হলেও এটি একেবারে অগোছালো হতে পারে না।

এটি শুধু বাহ্যিক সৌন্দর্যেই প্রভাবিত করে না, বরং আমাদের আত্মবিশ্বাসকেও ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। কিন্তু চিন্তা করবেন না, আপনার স্ক্যাল্পের যত্ন নেওয়া অনেক সহজ এবং প্রাকৃতিক উপায়ে সম্ভব। আপনার রান্নাঘরের মসলার র‍্যাকে এমন অনেক শক্তিশালী উপাদান লুকিয়ে আছে যা সহজেই আপনার চুল ও স্ক্যাল্পকে সুস্থ রাখতে পারে। আমি জানি, আপনি যখন সিদ্ধান্ত নেবেন, তখন আপনি নিজেকে যত্ন নিতে শুরু করবেন এবং ধীরে ধীরে আপনার চুল ও স্ক্যাল্পে পরিবর্তন দেখতে পাবেন।

আর হ্যাঁ, একটি গুরুত্বপূর্ণ কথা মনে রাখবেন আপনার যত্নের প্রক্রিয়া কোনো দ্রুত ফলের আশায় নয়, বরং একটি নিয়মিত অভ্যাসের মাধ্যমেই আপনার চুল ফিরে পাবে তার সঠিক স্বাস্থ্য। তো, আসুন আজ থেকেই একটু সময় ব্যয় করি এবং নিজের প্রতি যত্ন নিতে শুরু করি। আজকের মতো এখানেই শেষ করছি, ইনশাল্লাহ পরবর্তী কোন আর্টিকেলে আপনাদের সাথে আবার কথা হবে। আল্লাহর কাছে দোয়া রাখি সে পর্যন্ত ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন। 

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

সব বাজ ব্লগিং ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url