ছেলেদের চুল পড়া ও খুশকি দূর করার উপায়
ছেলেদের চুল পড়া ও খুশকি দূর করার উপায় খুঁজছেন? আপনি একা নন, কারণ এই সমস্যাটি অধিকাংশ ছেলেদের জন্য একটি পরিচিত সমস্যা। তবে আপনি যদি সঠিক উপায় অনুসরণ করেন, তাহলে সহজেই এই সমস্যার সমাধান পেতে পারেন। ছেলেদের চুলের খুশকি দূর করার উপায় খুবই সহজ, তবে প্রয়োজন কিছু নিয়মিত যত্ন এবং সঠিক প্রাকৃতিক উপাদান।
পোস্ট সূচিপত্রঃ ছেলেদের চুল পড়া ও খুশকি দূর করার উপায়
- ছেলেদের চুল পড়া ও খুশকি দূর করার উপায়
- চুল পড়ার পেছনে আসল কারণগুলো জানুন
- খুশকি হওয়ার কারণগুলো কি হতে পারে
- চিরতরে খুশকি দূর করার ঘরোয়া উপায়
- ব্যক্তিগত মতামতঃ ছেলেদের চুল পড়া ও খুশকি দূর করার উপায়
ছেলেদের চুল পড়া ও খুশকি দূর করার উপায়
কোমল চুলের যত্নে করণীয়
- চুল আঁচড়ানোর সময় যদি আপনি কোমল হাতে কাজ করেন এবং প্রাকৃতিক আঁশের ব্রাশ ব্যবহার করেন, তবে চুলের স্বাভাবিক তেল বজায় থাকে, যা চুলকে নমনীয় ও জীবন্ত রাখে।
- তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। হেয়ার ড্রায়ার বা স্ট্রেইটনার ব্যবহার করার সময় হিট প্রোটেকশন স্প্রে ব্যবহার করুন এবং কম তাপে কাজ করুন। এতে চুলে অতিরিক্ত তাপ কম পড়বে এবং চুলের প্রোটিন কাঠামো (চুলের শক্তিশালী গঠন) ঠিক থাকবে।
- চুল মোছার সময়, টাওয়েলের পরিবর্তে মাইক্রোফাইবার টাওয়েল বা টি-শার্ট দিয়ে হালকাভাবে চাপ দিন। এর ফলে ঘষাঘষি না হবে, কারণ এতে চুলের গোড়া দুর্বল হতে পারে।
- পরবর্তী টিপস হল, খুব টানটান করে চুল বাঁধা হেয়ারস্টাইল যেমনঃ পনিটেইল বা বান এড়িয়ে চলুন। এতে চুলের গোড়ায় অতিরিক্ত টান পড়ে এবং চুল পড়ার ঝুঁকি বাড়ে।
- আরেকটি বিষয়, রাসায়নিক ট্রিটমেন্ট যেমন ব্লিচিং বা কালার করিয়ে চুলের প্রোটিন কাঠামো দুর্বল হয়ে যেতে পারে। তাই, যদি সম্ভব হয়, এগুলি থেকে বিরত থাকুন।
- আপনি প্রতি রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে একটি হেয়ার মাস্ক ব্যবহার করুন। সপ্তাহে অন্তত একবার স্ট্রেংথেনিং মাস্ক দিলে চুল আরও মজবুত ও উজ্জ্বল হবে।
স্ক্যাল্পের অথবা খুলির যত্ন নিতে হবে
- নিয়মিত স্ক্যাল্প ম্যাসাজঃ আপনারা জানেন, নিয়মিত ম্যাসাজ করলে স্ক্যাল্পে রক্ত সঞ্চালন (রক্ত প্রবাহ) বাড়ে এবং হেয়ার ফলিকল – অর্থাৎ চুলের গোড়া – পুষ্টি পায়। গবেষণায় বলা হয়েছে, এটি চুলের ঘনত্ব বাড়াতেও সহায়ক। তাই, সপ্তাহে কয়েকবার বা প্রতিদিন একটু করে ম্যাসাজ করলে আপনি নিজের চুলে নতুন প্রাণ নিয়ে আসতে পারবেন।
- স্ক্যাল্প পরিষ্কার রাখুনঃ চুল পড়া রোধে স্ক্যাল্পের পরিচ্ছন্নতা (খুলি বা মাথার ত্বক পরিষ্কার রাখা) অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অতিরিক্ত তেল বা ময়লা জমলে হেয়ার ফলিকল বাধাগ্রস্ত হতে পারে। তাই, মৃদু ক্লিনজিং শ্যাম্পু ব্যবহার করে নিয়মিত স্ক্যাল্প পরিষ্কার রাখুন, যাতে আপনার খুলির পরিবেশ সবসময় সতেজ এবং স্বাস্থ্যকর থাকে।
- স্ক্যাল্প এক্সফোলিয়েশনঃ স্ক্যাল্পে জমে থাকা মৃত কোষগুলো বের করে নেওয়া খুবই জরুরি। সপ্তাহে একবার প্রাকৃতিক স্ক্রাব ব্যবহার করে খুলির মৃত কোষ দূর করতে পারেন। এতে করে স্ক্যাল্পে নতুন কোষ জন্মাতে সাহায্য করবে এবং চুল আরও স্বাস্থ্যবান হবে।
- সূর্যের অতিরিক্ত রোদ থেকে রক্ষাঃ চুলের যত্নে একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো, অতিরিক্ত সূর্যের ক্ষতিকর রোদ থেকে স্ক্যাল্প (মাথার ত্বক)কে সুরক্ষা দেওয়া। যখন বাইরে থাকবেন, টুপি বা ছাতা ব্যবহার করে খুলিকে সুরক্ষিত রাখুন। এতে স্ক্যাল্প পুড়ে যাওয়ার আশঙ্কা কমে যাবে এবং চুল পড়ার ঝুঁকি হ্রাস পাবে।
- প্রদাহ কমাতে চা গাছের তেলঃ যদি আপনার স্ক্যাল্পে কখনও কোনো প্রদাহ (সুগন্ধি বা প্রদাহজনক অবস্থার লক্ষণ) দেখা দেয়, তাহলে হালকা চা গাছের তেল (Tea Tree Oil) দিয়ে ম্যাসাজ করতে পারেন। তবে, তেলের ব্যবহার শেষে অবশ্যই ভালোভাবে ধুয়ে ফেলুন, যাতে তেলের অবশিষ্টাংশ থেকে কোনো সমস্যা না হয়।
- তেল দিয়ে হালকা ম্যাসাজঃ আপনার স্ক্যাল্প যদি একটু শুষ্ক বা উত্তেজিত মনে হয়, তাহলে সপ্তাহে একবার নারকেল, জৈতুন বা আরগান তেল দিয়ে সরাসরি হালকা ম্যাসাজ করুন। এটি স্ক্যাল্পকে হাইড্রেট (ভেজা) রাখবে, তবে তেল ব্যবহারের পর পরিষ্কার করে নিন, যাতে চুলে অতিরিক্ত তেল না থাকে।
সঠিক হেয়ার প্রোডাক্ট নির্বাচন
- বায়োটিন যুক্ত শ্যাম্পুঃ আপনারা যদি মনে করেন চুলের বৃদ্ধিতে একটু দেরি হচ্ছে বা চুল পাতলা দেখাচ্ছে, তাহলে বায়োটিন যুক্ত শ্যাম্পু ব্যবহার করতে পারেন। এটি চুলের বৃদ্ধিতে সহায়ক বলে প্রমাণিত হয়েছে, ঠিক যেন আপনার চুলে নতুন প্রাণ ফিরে আসছে।
- কঠোর ডিটারজেন্ট ও রাসায়নিক যুক্ত শ্যাম্পু এড়িয়ে চলুনঃ আপনারা খেয়াল রাখবেন, যে শ্যাম্পুগুলোতে অধিক রাসায়নিক থাকে, সেগুলো আপনার স্ক্যাল্পের প্রাকৃতিক তেল (যা চুলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ) কে তুলে ফেলে। এর ফলে, স্ক্যাল্প শুকনো হয়ে যায় এবং চুল দুর্বল হয়। তাই, প্রাকৃতিক উপাদানে তৈরি এমন পণ্য ব্যবহার করার চেষ্টা করুন।
- সালফেট-মুক্ত শ্যাম্পুঃ সালফেট মুক্ত শ্যাম্পু গুলো আপনার চুলের প্রাকৃতিক তেল বজায় রাখতে সাহায্য করে। আপনারা লক্ষ্য করবেন, এতে চুলে প্রাকৃতিক নমনীয়তা ফিরে আসে, যা চুলকে আরো স্বাস্থ্যবান করে তোলে।
- খুশকি-প্রতিরোধী শ্যাম্পুঃ আপনার স্ক্যাল্পে খুশকি না থাকলেও, নিয়মিত খুশকি-প্রতিরোধী শ্যাম্পু ব্যবহার করলে স্ক্যাল্প সবসময় স্বাভাবিক ও সতেজ থাকে। এটি আপনার স্ক্যাল্পকে স্বাস্থ্যবান রাখার একটি ভালো উপায়।
- প্রোটিন-সমৃদ্ধ কন্ডিশনারঃ প্রোটিন হলো চুলের শক্তি। তাই, প্রোটিন-সমৃদ্ধ কন্ডিশনার ব্যবহারের মাধ্যমে আপনারা চুলকে আরও মজবুত করে তুলতে পারেন। এতে আপনার চুলে প্রাকৃতিক উজ্জ্বলতা ফিরে আসে।
- ভলিউমাইজিং সিরামঃ আপনার চুল যদি পাতলা বা বেঁকে বেঁকে দেখায়, তবে ভলিউমাইজিং সিরাম ব্যবহার করে দেখতে পারেন। এই সিরাম চুলকে উঠিয়ে রাখে এবং ঘন দেখায়। তবে, একটি বিষয় খেয়াল রাখতে হবে প্রোডাক্ট লাগানোর আগে নিশ্চিত হয়ে নিন যে, স্ক্যাল্প সম্পূর্ণ শুকনো আছে কিনা যাতে প্রোডাক্ট ঠিকভাবে কাজ করতে পারে।
খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন করুন
- ডিম খানঃ ডিম হলো বায়োটিন ও প্রোটিনের উৎকৃষ্ট উৎস। এটি চুলের শক্তি বাড়ায় এবং চুলের বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। যেন, আপনি প্রতিদিন একটু করে এনার্জি পান এবং চুলও থাকে শক্তিশালী ও সুস্থ।
- সবুজ শাকসবজি খানঃ পালং শাকসহ সবুজ শাকসবজি খেলে আপনি পাবেন ভিটামিন A, C এবং আয়রন। এই উপাদানগুলো চুলকে আরও মজবুত ও উজ্জীবিত করে, ঠিক যেন তারা নতুন জীবন লাভ করছে।
- তৈলাক্ত মাছ খানঃ সালমন বা অন্যান্য তৈলাক্ত মাছ খান। এতে থাকা ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড ও প্রোটিন চুলের বৃদ্ধিতে সরাসরি ভালো প্রভাব ফেলে। এটি চুলে এক ধরনের জীবন্ত ও শক্তিশালী প্রভাব আনে, যা চুলকে আরও সুস্থ এবং সজীব করে তোলে।
- আভোকাডো খানঃ আভোকাডো খেলে স্ক্যাল্পে রক্ত সঞ্চালন বাড়ে, যা চুলের বৃদ্ধিকে সহায়তা করে। এটি এমন যেন আপনার চুলে একটি প্রাকৃতিক উজ্জ্বলতা ফিরে আসছে।
- বাদাম ও বীজ খানঃ বাদাম, বীজ ও নাট থেকে পাওয়া জিঙ্ক চুল পড়া কমাতে অনেক উপকারী। এগুলো আপনাদের চুলকে সুস্থ ও খোলখোলা করে তোলে, যেন প্রতিদিন এক নতুন হাসি ফুটে ওঠে চুলে।
- গাজর ও মিষ্টি আলু খানঃ গাজর ও মিষ্টি আলুতে থাকা বিটা ক্যারোটিন আপনার চুলের স্বাস্থ্যকে আরও উন্নত করে। এটি চুলের প্রতি প্রকৃতির এক দান, যা আপনাদেরকে স্বাভাবিক সৌন্দর্য প্রদান করে।
- পানি পানঃ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, পর্যাপ্ত পানি পান করুন প্রতিদিন অন্তত ৮ গ্লাস। চুলও তো পানি চায়, আর হাইড্রেশন থাকলে চুল শুষ্ক বা ভঙ্গুর হয়ে পড়ার আশঙ্কা কমে যায়।
মেডিকেল ট্রিটমেন্ট
- মিনোক্সিডিল (Minoxidil, রোগেইন): এটি একটি ওভার-দ্য-কাউন্টার (কোন প্রেসক্রিপশন ছাড়াই পাওয়া যায় এমন) লোশন বা ফোম, যা স্ক্যাল্পে প্রয়োগ করা হয়। এটি স্ক্যাল্পে রক্ত প্রবাহ বাড়ায় এবং চুলের বৃদ্ধি উদ্দীপিত করে। সাধারণত, এটি দিনে দুইবার ব্যবহার করা হয়।
- মিনোক্সিডিল (Minoxidil, রোগেইন): এটি একটি ওভার-দ্য-কাউন্টার (কোন প্রেসক্রিপশন ছাড়াই পাওয়া যায় এমন) লোশন বা ফোম, যা স্ক্যাল্পে প্রয়োগ করা হয়। এটি স্ক্যাল্পে রক্ত প্রবাহ বাড়ায় এবং চুলের বৃদ্ধি উদ্দীপিত করে। সাধারণত, এটি দিনে দুইবার ব্যবহার করা হয়।
- ফিনাস্টেরাইড (Finasteride, প্রোপেসিয়া): এটি একটি প্রেসক্রিপশন ওষুধ, যা DHT (ডাইহাইড্রোটেস্টোস্টেরোন) নামক হরমোনের মাত্রা কমায়, যা চুল পড়ার জন্য দায়ী। এটি শুধুমাত্র পুরুষদের জন্য অনুমোদিত, তাই ব্যবহারের আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিৎ।
- PRP (প্লাটলেট-রিচ প্লাজমা) থেরাপিঃ এই চিকিৎসায় আপনার নিজের রক্ত থেকে প্লাটলেট সমৃদ্ধ প্লাজমা সংগ্রহ করে তা স্ক্যাল্পে ইনজেকশন দেওয়া হয়। এতে চুলের বৃদ্ধিতে সহায়ক প্রভাব পড়ে।
- হেয়ার ট্রান্সপ্লান্ট সার্জারিঃ যখন অন্যান্য চিকিৎসা পদ্ধতির মাধ্যমে যথেষ্ট ফলাফল পাওয়া না যায়, তখন মাথার পিছনের অংশ থেকে চুল সংগ্রহ করে টাক পড়া স্থানে প্রতিস্থাপন করা হয়।
মানসিক চাপ কমানো
আপনারা যদি লক্ষ্য করে থাকেন যে, মানসিক চাপের কারণে চুল পড়া শুরু হয়েছে, তাহলে নিচের সহজ কৌশলগুলো অনুসরণ করতে পারেন।- নিয়মিত ব্যায়ামঃ হালকা হাঁটা বা ব্যায়াম করলে শরীরে স্ট্রেস হরমোন কমে যায় এবং মানসিক শান্তি বৃদ্ধি পায়। এতে শরীর ও মন দুটোই ভালো থাকে।
- যোগব্যায়াম ও মেডিটেশনঃ ডাউনওয়ার্ড ফেসিং ডগ এবং নিলিং পোজ এর মত ব্যায়াম ও ধ্যান করলে মানসিক চাপ অনেকটা কমে যায়। এটি শরীরকে শিথিল করে এবং মনকে শান্ত রাখে।
- পর্যাপ্ত ঘুমঃ প্রতিদিন ৭-৮ ঘণ্টা ঘুম নিশ্চিত করলে শরীর ও মন দুটোই সতেজ থাকে এবং চাপ কমে।
- আরামদায়ক মাসাজঃ মাথা ও ঘাড়ে নরম মাসাজ করলে মাংসপেশী শিথিল হয় এবং চাপ কমে, যা চুলের স্বাস্থ্যেও ইতিবাচক প্রভাব ফেলে।
- নিজের জন্য সময়ঃ অল্প সময়ের জন্য কোনো কিছু এমনভাবে করা যা আপনার ভালো লাগে বা আপনি উপভোগ করেন। এছাড়া বন্ধুদের সাথে কথা বলা বা প্রকৃতির মাঝে হাঁটাহাঁটি আপনার মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করবে এবং আপনাকে আরও ভালো অনুভব করাবে।
খুশকি দূর করার উপায়
খুশকি প্রতিরোধী শ্যাম্পু ব্যবহার
আজ আমি আপনাদের সাথে খুশকি প্রতিরোধের জন্য সঠিক শ্যাম্পু বেছে নিতে সাহায্য করবো। আমাদের মাথার ত্বকে অনেক সময় খুশকি দেখা দেয়, আর এর সমাধান যেমন সহজ, তেমনি কার্যকর।- জিঙ্ক পাইরিথিয়ন যুক্ত শ্যাম্পুঃ এটি অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল এবং অ্যান্টিফাঙ্গাল হিসেবে কাজ করে, যা স্ক্যাল্পের ব্যাকটেরিয়া এবং ছত্রাকের সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে। উদাহরণস্বরূপ, হেড অ্যান্ড শোল্ডার্স বা ডিএইচএস জিঙ্ক।
- সেলেনিয়াম সালফাইড যুক্ত শ্যাম্পুঃ এটি ছত্রাক প্রতিরোধী এবং স্ক্যাল্পের কোষ পুনর্গঠন ধীর করে। উদাহরণস্বরূপ, সেলসান ব্লু বা হেড অ্যান্ড শোল্ডার্স ইনটেনসিভ।
- কোল টার যুক্ত শ্যাম্পুঃ এটি স্ক্যাল্পের কোষ মৃত্যুকে ধীর করে, যা স্ক্যাল্পের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। উদাহরণস্বরূপ, নিউট্রোজেনা টি/জেল বা স্ক্যাল্প ১৮ কোল টার শ্যাম্পু।
- কেটোকোনাজোল যুক্ত শ্যাম্পুঃ এটি একটি শক্তিশালী অ্যান্টিফাঙ্গাল এজেন্ট হিসেবে কাজ করে, যা চুলের সমস্যার জন্য কার্যকর। উদাহরণস্বরূপ, নিজোরাল।
- স্যালিসাইলিক এসিড যুক্ত শ্যাম্পুঃ এটি স্ক্যাল্পের খোসা অপসারণ করে, যা স্ক্যাল্পের পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে। উদাহরণস্বরূপ, নিউট্রোজেনা টি/এসএল।
শ্যাম্পু ব্যবহারের সঠিক পদ্ধতি
আপনারা যখন শ্যাম্পু ব্যবহার করবেন, কিছু সহজ কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ নিয়ম মাথায় রাখা দরকার। প্রথমেই, চুল ভালো করে ভিজিয়ে নিন যাতে শ্যাম্পু সহজে কাজ করতে পারে। শ্যাম্পু নেওয়ার পর, দয়া করে লেবেলটা ভালো করে পড়ে দেখুন, কারণ বেশিরভাগ শ্যাম্পু স্ক্যাল্পে ৫-১০ মিনিট রেখে দেওয়ার নির্দেশ থাকে। আপনারা ধীরে ধীরে আঙ্গুলের ডগা দিয়ে স্ক্যাল্পে হালকা ম্যাসাজ করুন। মনে রাখবেন, নখ দিয়ে চাপ দিলে ত্বকে ক্ষতি হতে পারে। এখন চুলের ধরনের উপর নির্ভর করে শ্যাম্পু ব্যবহারের পরিমাণ ঠিক করুন।- সোজা বা তৈলাক্ত চুলের জন্য সপ্তাহে ২-৩ বার মেডিকেটেড শ্যাম্পু ব্যবহার করুন, অন্য দিনগুলোতে সাধারণ শ্যাম্পু ব্যবহার করতে পারেন।
- আর কোঁকড়ানো বা শুষ্ক চুলের ক্ষেত্রে, সপ্তাহে একবার মেডিকেটেড শ্যাম্পু যথেষ্ট এবং ২-৩ দিন শ্যাম্পু করা থেকে বিরত থাকুন।
খাদ্যাভ্যাস ও লাইফস্টাইল পরিবর্তন
- প্রোবায়োটিক সমৃদ্ধ খাবার (যেমন: দই, কিমচি)।
- ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড সমৃদ্ধ খাবার।
- ভিটামিন বি-সমৃদ্ধ খাবার।
- চিনি ও প্রক্রিয়াজাত খাবার কম খান।
- পর্যাপ্ত পানি পান করুন।
- ধূমপান ত্যাগ করুন।
- মানসিক চাপ কমান।
কখন ডাক্তারের পরামর্শ নেবেন
- ড্যানড্রাফ শ্যাম্পু ব্যবহার করার পরেও ৪-৬ সপ্তাহের মধ্যে উন্নতি না দেখা যায়।
- চুলকানি বা খুশকি আরও বেড়ে যায়।
- স্ক্যাল্প (মাথার ত্বক) লাল বা ফোলা হয়ে যায়।
- ভ্রু, নাকের ভাঁজ, কান এমনকি শরীরের অন্য কোনো অংশেও লাল ও খোসা উঠতে শুরু করে অথবা দীর্ঘদিন ধরে গুরুতর খুশকির সমস্যা দেখা দেয়।
চুল পড়ার পেছনে আসল কারণগুলো জানুন
জেনেটিক ফ্যাক্টর এবং চুল পড়ার প্রকৃত কারণ
চুল পড়ার সবচেয়ে সাধারণ কারণ হল অ্যান্ড্রোজেনেটিক অ্যালোপেশিয়া, যা পুরুষদের
মধ্যে মেল প্যাটার্ন বল্ডনেস এবং মহিলাদের মধ্যে ফিমেল প্যাটার্ন হেয়ার লস
হিসেবে পরিচিত। এখন হয়তো বা আপনার মনে প্রশ্ন আসতে পারে, মেল প্যাটার্ন বল্ডনেস
আবার কি? সহজ ভাবে বললে পুরুষদের মধ্যে চুল পড়ার একটি বিশেষ ধরনের সমস্যা, যা
সাধারণত বংশগত এবং হরমোনাল কারণে হয়। এটি সাধারণত পুরুষদের মাথার উপরের অংশে
চুলের লাইন সরে যাওয়া এবং শেষে মাথার মাঝখানে পুরো চুল পড়ে যাওয়ার পরিস্থিতি
সৃষ্টি করে।
অপরদিকে ফিমেল প্যাটার্ন হেয়ার লস হচ্ছে মহিলাদের মধ্যে
চুল পড়ার আরেকটি সাধারণ সমস্যা। এটি পুরুষদের চুল পড়ার মতো নয়, তবে মহিলাদের
মাথার উপরের অংশে বা মাথার মাঝখানে চুল পাতলা হতে শুরু করে। গবেষণায় দেখা
গেছে, পুরুষদের ৮০% এবং মহিলাদের ৫০% এই ধরনের চুল পড়ায় আক্রান্ত হয়। বয়স
বাড়ার সাথে সাথে এবং জেনেটিক কারণে চুলের ফলিকলগুলি ডাইহাইড্রোটেস্টোস্টেরন
(DHT) নামক হরমোনের প্রতি অতিসংবেদনশীল হয়ে পড়ে। DHT চুলের ফলিকল সংকুচিত করে,
যা চুলকে ছোট, পাতলা এবং দুর্বল করে তোলে।
এই জিনগত প্রবণতা প্রায়ই
পরিবারের মধ্যে দেখা যায়, এবং গবেষণায় দেখা গেছে, এর বংশগত হার
০.৮১ শতাংশ। যা পরিবারের মধ্যে এই ধরনের চুল পড়ার প্রবণতা প্রমাণ করে। এটি
একটি পলিজেনিক বৈশিষ্ট্য, অর্থাৎ এটি একাধিক জিন দ্বারা প্রভাবিত। বিশেষ করে
অ্যান্ড্রোজেন রিসেপ্টর (AR) জিন এবং ৫ আলফা রিডাক্টেজ জিনের পরিবর্তন
অ্যান্ড্রোজেনেটিক অ্যালোপেশিয়া তে প্রভাব ফেলে। এছাড়াও, X ক্রোমোজোমের AR জিন
এবং ইকটোডিসপ্লাসিন A2 রিসেপ্টর (EDAR2) জিনের মধ্যে সম্পর্কও পাওয়া গেছে।
হরমোনাল ভারসাম্যহীনতা ও চুল পড়ার কারণ
মহিলাদের ক্ষেত্রে মেনোপজ (মহিলাদের মাসিক বন্ধ হওয়া), গর্ভাবস্থা বা জন্মনিয়ন্ত্রণ পিল ব্যবহারের ফলে হরমোনের ভারসাম্য ভেঙে যায়, যেমন এস্ট্রোজেন (মহিলাদের প্রধান হরমোন) ডমিনেন্স থেকে টেস্টোস্টেরন (পুরুষ হরমোন) ও প্রোজেস্টেরনের (অপর একটি মহিলা হরমোন) ভারসাম্য ঠিক থাকেনা। তাছাড়া, থাইরয়েড হরমোনের পরিবর্তন (থাইরয়েড গ্রন্থি থেকে উৎপন্ন হরমোনের সমস্যা) যেমন হাইপোথাইরয়েডিজম (থাইরয়েডের কার্যক্ষমতা কমে যাওয়া) বা হাইপারথাইরয়েডিজম (থাইরয়েডের অতিরিক্ত কাজ করা) ও চুল পড়ার অন্যতম কারণ হয়ে থাকে।
মানসিক চাপ ও চুল পড়ার প্রভাব
আমাদের জীবনে সময়ে সময়ে নানা ধরণের চাপ আসে। কখনো শারীরিক অসুস্থতা, বড় অপারেশন
বা সংক্রমণের কারণে এবং কখনো কর্মক্ষেত্রে চাপ, পারিবারিক সমস্যা কিংবা অজানা
দুশ্চিন্তা ও বিষণ্ণতা (মনোযোগের অভাব বা হতাশা) কারণে আমরা মানসিকভাবে ক্লান্ত
হয়ে পড়ি। দীর্ঘদিন ধরে এই চাপ আমাদের শরীরের অনেক প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করে,
যার মধ্যে অন্যতম হলো চুল পড়ার সমস্যা। Harvard University-এর এক গবেষণায় দেখা
গেছে, দীর্ঘস্থায়ী স্ট্রেস আমাদের দেহের
সিম্পাথেটিক নার্ভাস
সিস্টেম (শরীরের এমন একটি সিস্টেম যা বিপদের সময়ে আমাদের দেহকে প্রস্তুত রাখে) কে
সক্রিয় করে, যা মেলানোসাইট স্টেম সেল (চুলের জন্য দায়ী কোষ) কে ক্ষয় করে দেয়।
এর ফলে চুলের নতুন বৃদ্ধিতে বাধা সৃষ্টি হয়। তদুপরি, স্ট্রেস হরমোন কর্টিসল
(দেহে চাপ বা উদ্বেগের প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করা হরমোন) আমাদের চুলের গুরুত্বপূর্ণ
উপাদান যেমন হাইয়ালুরোনান (এক ধরনের প্রাকৃতিক উপাদান যা চুলের স্বাস্থ্য বজায়
রাখে) ও প্রোটিওগ্লাইকান (চুলের ফলিকল গঠনে সহায়ক প্রোটিন) কে ভেঙে দেয়, যা
স্বাভাবিক ফলিকল গঠনে সহায়তা করে।
পুষ্টির অভাবে চুল পড়া
আমাদের শরীরকে সুস্থ রাখতে প্রতিটি পুষ্টি উপাদান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। চুল, যা
মূলত প্রোটিন এবং কেরাটিন দিয়ে তৈরি। চুলের সুস্থতা বৃদ্ধির জন্য পর্যাপ্ত পুষ্টি
অত্যন্ত জরুরি। পুষ্টির অভাব হলে, চুল পড়া শুরু হতে পারে। তাহলে চলুন কোন পুষ্টির
অভাবে সাধারণত চুল পড়ে থাকে তা দেখে নেওয়া যাক।
- আয়রনঃ এটি এমন একটি উপাদান যা আমাদের চুলের বৃদ্ধিকে শক্তিশালী করে। এটি ডিএনএ সংশ্লেষণে (কোষের প্রতিলিপি তৈরি) সহায়তা করে, যা চুলের গঠন এবং বৃদ্ধি নিশ্চিত করে। পৃথিবীজুড়ে আয়রনের অভাব সবচেয়ে বেশি দেখা যায়, এবং এটি চুল পড়ার অন্যতম কারণ হতে পারে। বিশেষ করে টেলোজেন এফ্লুভিয়াম (চুল পড়ার একটি সমস্যা যেখানে চুল অপ্রত্যাশিতভাবে বিশ্রাম অবস্থায় চলে যায় এবং পরে কয়েক মাস পর পড়ে যায়)। কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, TMPRSS6 নামক জিনের পরিবর্তন (মিউটেশন) আয়রনের অভাবের সঙ্গে সম্পর্কিত, আর সঠিক আয়রন চিকিৎসায় এই ধরনের চুল পড়া অনেকাংশে ঠিক করা যেতে পারে।
- জিঙ্কঃ এটি আপনার চুলের টিস্যু বৃদ্ধিতে সাহায্য করে এবং চুলের ফলিকলের অয়েল গ্রন্থিগুলির কার্যকারিতা নিয়ন্ত্রণ করে। আপনি লক্ষ্য করবেন, ছোট খাটো পুষ্টির অভাবও চুলের স্বাস্থ্যকে দুর্বল করে দিতে পারে।
- বায়োটিন বা ভিটামিন বিঃ যদিও এটি অনেক খাবারে পাওয়া যায় এবং অন্ত্রের ব্যাকটেরিয়া (পেটের জীবাণু) দ্বারা উৎপাদিত হয়, এর অভাবও কখনো কখনো চুল পড়ার কারণ হতে পারে।
- ভিটামিন ডিঃ ভিটামিন ডি রিসেপ্টর (VDR) এর মিউটেশন (প্রোটিনের পরিবর্তন) চুল পড়ার কারণ হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, অ্যালোপেশিয়া অ্যারিয়াটা (চুল পড়ার একটি রোগ যেখানে মাথার কিছু অংশে চুল পড়ে যায়) রোগীদের মধ্যে প্রায়শই ভিটামিন ডি'র মাত্রা কম পাওয়া যায়। আরেকটি বিষয় আপনাদেরকে জানিয়ে রাখি তা হল অতিরিক্ত ভিটামিন এ চুল পড়ার কারণ হতে পারে।
চুল পড়ার মেডিকেল কারণ
আজ আমরা চুল পড়ার কিছু মেডিকেল কারণ নিয়ে সহজ ভাষায় আলোচনা করবো, যেন আপনি এক
বন্ধুর সাথে বসে কথা বলছেন। তাহলে চলুন, দেখে নেওয়া যাক চুল পড়ার কিছু
মেডিকেল কারণ সমূহ।
- অ্যালোপেশিয়া অ্যারিয়াটাঃ এটি একটি অটোইমিউন রোগ, যেখানে আপনার ইমিউন সিস্টেম (দেহের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার অংশ) চুলের ফলিকল (চুলের গোড়া) আক্রমণ করে। এর ফলে, মাথা, ভ্রু বা চোখের পাতায় ছোট ছোট টাক দেখা দেয়।
- থাইরয়েড সমস্যাঃ হাইপোথাইরয়েডিজম (থাইরয়েড গ্রন্থির কম কাজ) এবং হাইপারথাইরয়েডিজম (থাইরয়েড গ্রন্থির অতিরিক্ত কাজ) এই দুই ধরনের থাইরয়েড সমস্যা চুলের বৃদ্ধি চক্রকে (চুলের গঠন এবং বৃদ্ধি প্রক্রিয়া) প্রভাবিত করে এবং চুল পড়ার কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
- সিস্টেমিক লুপাস এরিথেমাটোসাসঃ লুপাস নামে এক অটোইমিউন রোগও চুল পড়ার সাথে জড়িত। এই রোগে আপনার শরীরের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা দেহের নিজস্ব অংশকে আক্রমণ করতে শুরু করে, যার ফলে চুল পড়া হতে পারে।
- ট্রাইকোটিলোম্যানিয়াঃ এই মানসিক অবস্থায় ব্যক্তি বারবার নিজের চুল টানে বা ছিঁড়ে ফেলে, যার কারণে চুল পড়ে যায়। চিকিৎসায় মূলত এই মানসিক অবস্থাকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে হয়।
- ট্রাইকোরেক্সিস নোডোসাঃ যদি চুলের শ্যাফ্টে (চুলের মূল অংশ) দুর্বলতা থাকে, তাহলে আঘাত বা অতিরিক্ত হেয়ার স্টাইলিং (চুল সাজানোর পদ্ধতি) এবং হেয়ার প্রোডাক্ট (চুলের যত্নের পণ্য) ব্যবহারে চুল ভেঙে যায়, যাকে ট্রাইকোরেক্সিস নোডোসা বলা হয়।
ঔষধের বিভিন্ন রকমের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া
আপনারা নিশ্চয়ই জানেন যে, আমাদের শরীরে যে ওষুধগুলো কাজ করে, সেগুলোর কিছু প্রভাব মাঝে মাঝে চুল পড়ার সমস্যাও তৈরি করতে পারে। যেমন, ক্যান্সার চিকিৎসায় ব্যবহৃত কেমোথেরাপি ওষুধ, বিশেষ করে ডক্সোরুবিসিন (অ্যাড্রিয়ামাইসিন), চুলের ফলিকলের মাইটোটিক কার্যকলাপ (চুলের গঠন এবং বৃদ্ধি প্রক্রিয়া) বাধাগ্রস্ত করে। এই প্রক্রিয়াকে আমরা অ্যানাজেন এফ্লুভিয়াম বলে জানি।
তদুপরি, কিছু অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট যেখানে লিথিয়াম থাকে ও চুল পড়ার সাথে জড়িত।
একইভাবে, উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে ব্যবহৃত বিটা-ব্লকারও এবং রক্ত পাতলা করার
ওষুধ, যেমন ওয়ারফারিন ও হেপারিন, কখনো কখনো চুলের স্বাভাবিক বৃদ্ধিতে বাধা
সৃষ্টি করে।আরও কিছু ওষুধ যেমন, অ্যাম্ফেটামাইন (যা ADHD চিকিৎসায় ব্যবহৃত),
লেভোডোপা (যা পার্কিনসন্স রোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত) এবং
আইসোট্রেটিনয়েন (অ্যাকনের জন্য ব্যবহৃত) এসব ওষুধগুলির ব্যবহারে
অনেক সময় চুল পড়ার সমস্যা দেখা দিতে পারে। দীর্ঘমেয়াদে স্টেরয়েড ও
অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের ক্ষেত্রেও এই সমস্যা দেখা দিতে পারে। প্রিয় বন্ধু,
যদি আপনারা এসব ওষুধ গ্রহণের পর চুল পড়ার সমস্যা অনুভব করেন, তাহলে দয়া করে
আপনার চিকিৎসকের সাথে আলোচনার মাধ্যমে সঠিক পরামর্শ নেওয়ার চেষ্টা করুন। আমাদের
প্রত্যেকের শরীর আলাদা এবং সঠিক যত্ন নেওয়া খুব জরুরি।
খুশকি হওয়ার কারণগুলো কি হতে পারে
এই তিনটি মিলেই খুশকির সমস্যা তৈরি করে। শীতের শুষ্কতা, গ্রীষ্মের ঘাম, মানসিক চাপ এবং ভিটামিনের ঘাটতির (যখন শরীরে পর্যাপ্ত ভিটামিন থাকে না) মতো বিষয়গুলোও এই সমস্যা আরও বাড়িয়ে দিতে পারে। সহজভাবে বলতে গেলে, আমাদের স্ক্যাল্পে প্রকৃতির বিভিন্ন উপাদানের সমন্বয়ে খুশকি তৈরি হয়। আসুন, আমরা একে অপরকে বোঝার চেষ্টা করি এবং নিজেদের যত্ন নিতে শুরু করি, যেন এই সমস্যাটি সহজেই সামলানো যায়।
খুশকি সৃষ্টির বৈজ্ঞানিক কারণ
Malassezia ছত্রাকের অতিসক্রিয়তা
Malassezia globosa এবং Malassezia restricta নামের এই দুই প্রজাতির ছত্রাক আমাদের স্ক্যাল্পে থাকা প্রাকৃতিক তেল বা সিবাম (scalp oil) কে ভেঙে ওলিক অ্যাসিড উৎপন্ন করে। এই ওলিক অ্যাসিড যখন ত্বকের উপরের স্তরে প্রবেশ করে, তখন তা প্রদাহ সৃষ্টি করে, যার ফলে ত্বকের কোষগুলো দ্রুত মারা যায় এবং খোসা আকারে ঝরে পড়ে। গবেষণার মতে, প্রায় ৫০% মানুষের ত্বক এই ওলিক অ্যাসিডের প্রতি খুবই সংবেদনশীল, যা খুশকির প্রবণতাকে আরও বাড়িয়ে দেয়। কিছু ক্ষেত্রে, এই সংবেদনশীলতা জিনগত কারণে আরও স্পষ্ট হয়ে ওঠে।
সিবাম গ্রন্থির অতিসক্রিয়তা
কিশোর বয়সে হরমোনাল পরিবর্তন (হরমোনের মাত্রার পরিবর্তন) কিংবা মানসিক চাপ বা স্ট্রেস (মানসিক চাপ) এর কারণে সিবাম উৎপাদন বাড়তে পারে। এই অতিরিক্ত তেল সেই ছত্রাকের বৃদ্ধিকে আরও উৎসাহ দেয়, ফলে খুশকির প্রবণতা বাড়ে। এই কারণেই পুরুষদের মধ্যে খুশকি সমস্যা সাধারণত বেশি লক্ষ্য করা যায়।
ত্বকের অস্বাস্থ্যকর পিএইচ ব্যালেন্স
ইমিউন সিস্টেমের অস্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া
পরিবেশগত ও জীবনযাপন সংক্রান্ত কারণ
মানসিক চাপ ও হরমোনাল পরিবর্তন
ভুল হেয়ার কেয়ার রুটিন
তবে বেশি শ্যাম্পু করলে ত্বকের প্রাকৃতিক তেল হারিয়ে যায়, যার ফলে ত্বক শুষ্ক হয়ে পড়ে। এছাড়াও, সিলিকন, প্যারাবেন বা সালফেটযুক্ত প্রোডাক্ট ব্যবহার করলে ত্বকের ছিদ্র বন্ধ হয়ে যেতে পারে এবং প্রদাহ দেখা দেয়। তাই, আমাদের উচিত পছন্দের হেয়ার প্রোডাক্ট সঠিকভাবে বেছে নেওয়া এবং পরিমিত শ্যাম্পু ব্যবহার করে নিজের স্ক্যাল্পকে সুস্থ রাখা।
চিরতরে খুশকি দূর করার ঘরোয়া উপায়
অ্যাপল সাইডার ভিনেগার
- ২ টেবিল চামচ অ্যাপল সাইডার ভিনেগার এবং ১ কাপ পানি মিশিয়ে নিন।
- শ্যাম্পু করার পর এই মিশ্রণটি স্ক্যাল্পে স্প্রে করুন।
- ৫ মিনিট মৃদু ম্যাসাজ করুন, যাতে উপাদানগুলো ভালোভাবে ছড়িয়ে পড়ে।
- শেষে ঠাণ্ডা পানি দিয়ে স্ক্যাল্প পরিষ্কার করে ধুয়ে ফেলুন।
প্রকৃতির অ্যান্টিফাঙ্গাল পাওয়ারহাউস নিম
- এক মুঠো নিম পাতা নিয়ে ২ কাপ পানিতে ১৫ মিনিট ফুটিয়ে নিন, তারপর ঠাণ্ডা করে নিন। এই পানিতে চুল ধুয়ে নিন এবং প্রায় ৩০ মিনিট পর শ্যাম্পু করুন।
- নিম পাতার পেস্টে যদি কিছুটা ভিন্নতা চান, তাহলে এতে কিছু দই (টক দই) মিশিয়ে ২০ মিনিট ধরে স্ক্যাল্পে লাগান।
কোকোনাট অয়েল প্লাস লেমন জুস
- ২ টেবিল চামচ গরম নারকেল তেল ও ১ টেবিল চামচ লেবুর রস ভালো করে মিশ্রিত করুন।
- এই মিশ্রণটি আপনার স্ক্যাল্পে ৩০ মিনিট ধরে ম্যাসাজ করে লাগিয়ে রাতভর লাগিয়ে রাখুন।
- সকালে মাইল্ড শ্যাম্পু (নরম শ্যাম্পু) দিয়ে চুল ভালো করে ধুয়ে ফেলুন।
অ্যালোভেরা জেল এর ব্যবহার
- প্রথমত, তাজা অ্যালোভেরা জেল সরাসরি স্ক্যাল্পে লাগান।
- অথবা, ১ চা চামচ মধু ও ২ চা চামচ অ্যালোভেরা জেল মিশিয়ে একটি মাস্ক তৈরি করুন এবং তা স্ক্যাল্পে লাগান।
- এরপর, ৪৫ মিনিট রেখে চুল ধুয়ে ফেলুন।
মেথি বীজ এর ব্যবহার
- ২ টেবিল চামচ মেথি বীজ সারারাত ভিজিয়ে রেখে সকালে পেস্ট করে নিন।
- পেস্টে ১ চা চামচ দই ও ১ চা চামচ মধু মিশিয়ে নিন।
- প্যাকটি স্ক্যাল্পে লাগিয়ে প্রায় ১ ঘণ্টা রাখুন।
- এরপর স্ক্যাল্প ভালো করে ধুয়ে ফেলুন।
টি ট্রি অয়েল এর গুনাগুন
- ২ ফোঁটা টি ট্রি অয়েল ও ২ টেবিল চামচ নারকেল তেল ভালো করে মিশিয়ে নিন।
- এই মিশ্রণটি আপনার স্ক্যাল্পে ২০ মিনিটের জন্য ম্যাসাজ করে লাগিয়ে রাখুন।
- এরপর চুল ধুয়ে ফেলুন।
- আপনার শ্যাম্পুর সাথে ৫ ফোঁটা টি ট্রি অয়েল মিশিয়ে ব্যবহার করতে পারেন।
দই প্লাস হেনা এর কার্যকারিতা
- প্রথমে, ৩ টেবিল চামচ হেনা পাউডার ও ১/২ কাপ দই ভালোভাবে মিশিয়ে নিন।
- এরপর, এই মিশ্রণটি আপনার স্ক্যাল্পে লাগিয়ে ৩০ মিনিট রেখে দিন।
- শেষে, চুল ভালো করে ধুয়ে ফেলুন।
আপনাকে কিছু বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে
- কোন উপাদানে এলার্জি রয়েছে সেটি টেস্ট করে নিতে হবে।
- ৬ সপ্তাহ ব্যবহারের পরও যদি উন্নতি না দেখা যায় তাহলে ডার্মালজিস্ট দেখাতে হবে।
- একসাথে একাধিক উপশম বা চিকিৎসা পদ্ধতি ব্যবহারের পরিবর্তে, একটি বা দুটি পদ্ধতি ব্যবহার করা উচিত।
ব্যক্তিগত মতামতঃ ছেলেদের চুল পড়া ও খুশকি দূর করার উপায়
এটি শুধু বাহ্যিক সৌন্দর্যেই প্রভাবিত করে না, বরং আমাদের আত্মবিশ্বাসকেও ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। কিন্তু চিন্তা করবেন না, আপনার স্ক্যাল্পের যত্ন নেওয়া অনেক সহজ এবং প্রাকৃতিক উপায়ে সম্ভব। আপনার রান্নাঘরের মসলার র্যাকে এমন অনেক শক্তিশালী উপাদান লুকিয়ে আছে যা সহজেই আপনার চুল ও স্ক্যাল্পকে সুস্থ রাখতে পারে। আমি জানি, আপনি যখন সিদ্ধান্ত নেবেন, তখন আপনি নিজেকে যত্ন নিতে শুরু করবেন এবং ধীরে ধীরে আপনার চুল ও স্ক্যাল্পে পরিবর্তন দেখতে পাবেন।
আর হ্যাঁ, একটি গুরুত্বপূর্ণ কথা মনে রাখবেন আপনার যত্নের প্রক্রিয়া কোনো দ্রুত ফলের আশায় নয়, বরং একটি নিয়মিত অভ্যাসের মাধ্যমেই আপনার চুল ফিরে পাবে তার সঠিক স্বাস্থ্য। তো, আসুন আজ থেকেই একটু সময় ব্যয় করি এবং নিজের প্রতি যত্ন নিতে শুরু করি। আজকের মতো এখানেই শেষ করছি, ইনশাল্লাহ পরবর্তী কোন আর্টিকেলে আপনাদের সাথে আবার কথা হবে। আল্লাহর কাছে দোয়া রাখি সে পর্যন্ত ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন।
সব বাজ ব্লগিং ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url