চুলের যত্নে কারি পাতার ব্যবহার

চুলের যত্নে কারি পাতার ব্যবহার এই কথাটি শুনে আপনি হয়তো অবাক হচ্ছেন তাই না। কীভাবে এই সাধারণ পাতাগুলো এতটা অসাধারণ হতে পারে। কারি পাতার ভিতরে এমন কিছু উপাদান বিদ্যমান রয়েছে যা চুলের খুশকি দূর করে, চুলের গোড়া মজবুত করে এবং চুলের উজ্জলতা বাড়ায়।

চুলের-যত্নে-কারি-পাতার-ব্যবহার
ব্যস্ততার এই শহরে ব্যস্ত মানুষগুলো চুলের যত্ন ঠিক মতো না নেওয়ার কারণে চুল পড়ে যাওয়া থেকে শুরু করে অকালে চুল পেকে যাওয়ার মতো নানা সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। ব্যস্ততার মাঝে আপনার ছোট্ট একটি পদক্ষেপ বয়ে নিয়ে আনতে পারে দীর্ঘস্থায়ী ফলাফল। চুলের যত্নে কারি পাতার ব্যবহার কি আসলেই লাভজনক চলুন, বিস্তারিত জানা যাক।

পোস্ট সূচিপত্রঃ চুলের যত্নে কারি পাতার ব্যবহার

চুলের যত্নে কারি পাতার ব্যবহার

চুলের যত্নে কারি পাতার ব্যবহার ভারতীয় উপমহাদেশ এবং দক্ষিণ এশিয়ায় আয়ুর্বেদিক চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এটি একটি সুগন্ধি গাছের পাতা যা ভারতীয় উপমহাদেশে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। কারি পাতা একটি প্রাকৃতিক উপাদান যা আপনার চুলের জন্য অত্যান্ত উপকারী। কারি পাতায় আপনি যে সমস্ত উপাদান পাবেন তা হলো ভিটামিন এ, ভিটামিন বি, এবং ভিটামিন সি, প্রোটিন, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, আয়রন, ক্যালসিয়াম ইত্যাদি। 

আপনার চুলের বৃদ্ধি, চুলের গোড়া  মজবুত এবং চুল ঝরার মতো যাবতীয় সমস্যার চমৎকার সমাধান হতে পারে কারি পাতা। চুলের গোড়া মজবুত এবং চুলের ঘনত্ব বৃদ্ধি করতে কারি পাতার হেয়ার প্যাক অত্যান্ত উপকারী। আপনি ঘরে বসেই এই হেয়ার প্যাকটি তৈরি করতে পারবেন। সেজন্য প্রথমে আধা কাপ কারি পাতা, আধা কাপ মেথি পাতা এবং একটি গোটা আমলকি নিন। ব্লেন্ডারে মিশ্রণটি ভালো করে প্রস্তুত করুন। মিশ্রণটি প্রস্তুত হয়ে গেলে মাথায় মেখে আধা ঘন্টা অপেক্ষা করুন।

তারপর উষ্ণ মৃদু গরম জল দিয়ে ধুয়ে নিন। এতে করে আপনার চুলের গোড়া মজবুত হবে এবং চুলের ঘনত্ব বৃদ্ধি পাবে। এছাড়া কারি পাতাকে আপনি তেল হিসেবেও ব্যবহার করতে পারবেন। কারি পাতার তেল আপনার চুলের জন্য অত্যান্ত উপকারী একটি উপাদান। কারি পাতার তেল প্রস্তুত করার জন্য আপনি একটি গরম পাত্রে নারকেল তেলের সঙ্গে কিছুটা কারি পাতা নিন। কিছুক্ষণ গরম করুন।

এরপর যখন ঠান্ডা হয়ে যাবে তখন ছাকনি দিয়ে ছেঁকে দিন। কারি পাতার এই তেলটি সপ্তাহে ২-৩ বার ব্যবহার করুন। এতে করে আপনার চুল ঘন ও স্বাস্থ্যকর হবে। আমাদের চুলের একটি কমন সমস্যা হল চুলে খুশকি। বাজারে চুলের খুশকি দূর করার জন্য হাজারো রকম প্রোডাক্ট পাওয়া যায়। কিন্তু এতে এমন কিছু কেমিক্যাল উপাদান থাকে যা আপনার চুলের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। 

চুলের খুশকি দূর করতে কারি পাতার পেস্ট হতে পারে চমৎকার একটি সমাধান। এটি মাথার চুলে আধা ঘন্টা রেখে পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। কারি পাতার এই পেস্টটি সপ্তাহে ২-৩ ব্যবহার করুন। আশা করা যায় আপনার সমস্যার সমাধান হবে। যাদের অতি অল্প বয়সেই চুল পেকে যাচ্ছে তাদের উদ্দেশ্যে বলবো আপনি এখন থেকেই কারি পাতার ব্যবহার শুরু করে দেন। কারণ কারি পাতাতে রয়েছে আয়রন ও ভিটামিন বি। এই দুইটি উপাদান আমাদের চুলের যে কালো ভাব সেইটা ধরে রাখতে সাহায্য করে।

কারি পাতা ব্যবহার করে কীভাবে চুল লম্বা করা যায়

চুল নিয়ে আমাদের আগ্রহর শেষ নাই। তার মধ্যে চুলগুলো যদি হয় লম্বা, ঘন, স্বাস্থ্যকর তাহলে তো কোন কথায় নেই। নিশ্চয়ই আপনিও লম্বা, ঘন, স্বাস্থ্যকর চুলের অধিকারী হতে চান তাই না। আপনার এই স্বপ্নকে বাস্তব রূপ দিতে কারি পাতার ব্যবহার আজ থেকে শুরু করুন। "মেডিকভার হসপিটাল" (Medicover Hospitals) যা একটি ভারতীয় স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান। তাদের প্রদত্ত তথ্যসূত্রেঃ

  • কারি পাতা চুলের গোড়কে শক্তিশালী করে এবং চুলের বৃদ্ধিতে অত্যান্ত সহায়ক।
  • এটি তো অবস্থিত অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা আমাদের মাথার ত্বকে প্রবেশ করে এবং চুলের গোড়াগুলিকে শক্তিশালী করে।
  • কারি পাতাতে রয়েছে প্রোটিন এবং বিটা ক্যারোটিন আঁচল পাতলা হওয়া কমাতে এবং চুল পড়া রোধে সহায়ক হিসেবে কাজ করে।
  • কারি পাতায় বিদ্যমান অ্যান্টিফাঙ্গাল, অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল এবং অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি মাথার ত্বক পরিষ্কার এবং স্বাস্থ্যকর রাখতে সাহায্য করে যা চুল বৃদ্ধির জন্য অনুকূল পরিবেশ তৈরি করে।

চুলের রুক্ষতা দূর করতে কারি পাতা কীভাবে কার্যকরী

আমরা সবাই কোন না কোন কাজে নিয়োজিত রয়েছি। প্রতিদিনের এই ব্যস্ততার মাঝে নিজেদেরকে নিয়ে ভাবার খুব একটা সময় হয় না। আপনি একদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে দেখলেন আপনার চুলগুলো খসখসে হয়ে গেছে, উজ্জ্বলতা হারিয়ে গেছে, চুল শুষ্ক হয়ে গেছে। নিশ্চয়ই আপনি চাইবেন না এ ধরনের পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে। চুলের এই রুক্ষতা দূর করতে কারি পাতার সাথে কিছু উপাদান যুক্ত করতে পারেন। যেমনঃ

  • কারি পাতা ও দইয়ের মিশ্রণ চুলের রুক্ষতা কমাতে সাহায্য করে।
  • কারি পাতা ও জবা ফুলের পেস্ট চুলের রুক্ষতা কমাতে অত্যান্ত সহায়ক।
  • কারি পাতা ও পেঁয়াজের রস এর মিশ্রণ রুক্ষতা কমাতে অত্যন্ত কার্যকরী।
  • কারি পাতা ও মেথির পেস্ট চুলের রুক্ষতা কমাতে সহায়ক হিসেবে কাজ করে।

কারি পাতার ব্যবহারে টাক মাথায় কি চুল গজানো সম্ভব

টাক পড়া অনেকের কাছে চিন্তার বিষয়। চিকিৎসা বিজ্ঞানের মতে টাক পড়া বা অ্যান্ড্রোজেনিক অ্যালোপেসিয়া (Androgenetic Alopecia) জিনগত অথবা বংশগত কারণে ঘটে থাকে। নতুন চুল গজানোর জন্য কারি পাতার ব্যবহারের প্রচলন রয়েছে। কারণ কারি পাতাতে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, অ্যামিনো অ্যাসিড, ভিটামিন এ, বি, সি, ও ই ইত্যাদি উপাদান রয়েছে। নতুন চুল গজাতে সহায়ক হিসেবে কাজ করে।

চুলের-যত্নে-কারি-পাতার-ব্যবহার
কারি পাতা ব্যবহার করলেই যে টাক মাথায় চুল গজাবে এমন প্রমাণ বিজ্ঞানের জগতে খুব সীমিত। কিছু গবেষণা থেকে পাওয়া যায় কারি পাতার সঙ্গে আপনি যদি নারকেল তেল, মেথি, পেঁয়াজের রস,ক্যাস্টর অয়েল মিশিয়ে ব্যবহার করেন তাহলে এটি রক্ত সঞ্চালন বাড়িয়ে চুলের বৃদ্ধিকে উত্তেজিত করতে পারে। তবে এটি ব্যাক্তিভেদে ভিন্ন ফলাফল হতে পারে। সেজন্য অবশ্যই আপনি একজন বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেবেন।

চুলের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধিতে কারি পাতার ভূমিকা

আপনি রাস্তাঘাটে চলাফেরা করার সময় কখনো কি খেয়াল করেছেন কিছু মানুষের চুল অনেক ঝলমলে এবং উজ্জ্বল হয়। আপনি হয়তো চিন্তা করছেন তারা চুলে এমন কি ব্যবহার করে যার কারণে তাদের চুল এত সুন্দর হয়। হতে পারে কারি পাতা তাদের সেই গোপন রহস্যের একটি অংশ। যুগ যুগ ধরে চুলের সৌন্দর্য বাড়ানোর জন্য কারি পাতা ব্যবহৃত হয়ে আসছে। আপনার নিষ্প্রাণ চুলে প্রাণ ফেরাতে কারি পাতার ভূমিকা অপরিসীম।

কারি পাতায় রয়েছে ভিটামিন এ, বি,সি, ই আয়রন ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। যা আপনার চুলের গভীরে পুষ্টি যোগায় ও আদ্রতা ধরে রাখতে সাহায্য করে। কারি পাতার পেস্ট বা তেল ব্যবহার করলে আপনার চুলের প্রাকৃতিক উজ্জ্বলতা ফিরে আসবে। এছাড়া কারি পাতা ও নারকেল তেলের সংমিশ্রণ আপনার চুলের কিউটিকল কে সুরক্ষিত রাখে। যা আপনার চুলকে চকচকে ও প্রাণবন্ত করে তোলে।

চুলের আগা ফাটা প্রতিরোধে কারি পাতার কার্যকারিতা

চুলের আগা ফাটা বর্তমানে একটি কমন সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। চুলের আগা ফাটা জনিত সমস্যা বিভিন্ন কারণে হয়ে থাকে। বিশেষ করে আদ্রতার অভাবে, শুষ্ক আবহাওয়া, বাজারে পাওয়া যায় এমন বিভিন্ন প্রোডাক্ট চুলে ব্যবহার করা ইত্যাদি। তাছাড়া পার্লারে ব্যবহৃত  হেয়ার ড্রায়ার, স্ট্রেইটনার বা কার্লিং আয়রনের মতো তাপপ্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে চুলের কোষ দুর্বল হয়ে যায়, যার কারণে আগা ফাটতে শুরু করে। চুলের আগা ফাটা প্রতিরোধে যা করবেন তা হলোঃ

  • কারি পাতা বেটে চুলের আগায় লাগিয়ে রাখুন।
  • নিয়মিত কারি পাতার তেল ব্যবহার করুন
  • কারি পাতার হেয়ার মাস্ক ব্যবহার করে দেখতে পারেন

চুল পড়া রোধে কারি পাতার ব্যবহার

  • কারি পাতায় প্রোটিন ও ভিটামিন উপস্থিতির ফলে এটি আপনার চুলের গোড়া শক্ত করে এবং চুল পড়া কমায়।
  • কিছু কারি পাতা বেটে নিন। এরপর পেঁয়াজের রস এবং বেটে নেওয়া কারি পাতা  মিশিয়ে চুলে লাগান।
  • একঘন্টা পর শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে নিন।

কারি পাতার অপকারিতা এবং কিছু ক্ষেত্রে এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া

চুলের যত্নে কারি পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জানা আমাদের প্রত্যেকের জন্য আবশ্যক। ইতিপূর্বে আমরা চুলের যত্নে কারি পাতার গুনাগুন এবং এর ব্যবহার সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে এসেছি। যদিও কারি পাতা আমাদের জন্য অনেক উপকারী তবে কিছু ক্ষেত্রে অপকারিতাও হতে পারে। সেজন্য এটি ব্যবহার করার পূর্বে আপনাকে অবশ্যই সতর্ক থাকতে হবে। কারি পাতার অপকারিতা এবং এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া তুলে ধরা হলোঃ

চুলের-যত্নে-কারি-পাতার-ব্যবহার
  • কিছু মানুষ কারি পাতা ব্যবহার করলে এলার্জির প্রতিক্রিয়া বা সংবেদনশীলতা দেখা দিতে পারে।
  • কারি পাতার তেলটি অনেক ভারী। সঠিক পরিমাণে ব্যবহার না করলে, অথবা সঠিকভাবে ধুয়ে ফেলা না হলে তৈলাক্ত অবশিষ্ট অংশ থেকে যেতে পারে।
  • কারি পাতার পেস্ট বা তেল ব্যবহারের সময় আপনার পোশাক অথবা তোয়ালে দাগ পড়ে যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে পুরনো জিনিসপত্র ব্যবহার করুন।
  • অনেক ব্যক্তির ক্ষেত্রে কারি পাতার উপকারিতা দেখা গিয়েছে কিন্তু তার বৈজ্ঞানিক প্রমাণ খুব কম রয়েছে।
  • আপনি যদি স্বাস্থ্যগত কারণে কারি পাতা ব্যবহার করে থাকেন, তাহলে এটি কোন মিথস্ক্রিয়া সৃষ্টি করছে কিনা সে সম্পর্কে নিশ্চিত হতে একজন চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করুন।

ব্যক্তিগত মতামতঃ চুলের যত্নে কারি পাতার ব্যবহার

চুলের যত্নে কারি পাতার ব্যবহার খুবই কার্যকরী। কারি পাতা চুলে কিভাবে ব্যবহার করতে হয় আশা করি আপনারা বুঝতে পেরেছেন। তবে এটি ব্যবহারের ক্ষেত্রে অবশ্যই সর্তকতা অবলম্বন করতে হবে। কারণ কারি পাতার কার্যকারিতা ব্যক্তিভেদে পরিবর্তিত হতে পারে। পোস্টটি পড়ে আপনি যদি উপকৃত হন তাহলে শেয়ার করতে ভুলবেন না এবং ভুল ত্রুটি হলে ক্ষমাসুলভ দৃষ্টিতে দেখবেন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

সব বাজ ব্লগিং ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url